মাধ্যমিকের গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ছিল আজ শনিবার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া গেছে প্রশ্নফাঁসের খবর। বেশির ভাগ জায়গাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলেছে পরীক্ষার প্রশ্ন। এসব ঘটনায় শিক্ষক, পরীক্ষার্থীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া এক পরীক্ষার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ছয় শিক্ষার্থীকে। কারাদণ্ড হয়েছে এক গৃহশিক্ষকের।
রাজশাহী
রাজশাহীতে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন পেয়ে রাবিয়া ইসলাম (১৯) নামের এক কলেজছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে মিলিয়ে দেখা গেছে, পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া নৈর্ব্যক্তিক অংশের ৩০টিই মিলে গেছে। ওই কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রাবিয়া রাজশাহী শহরের সরকারি সিটি কলেজের গণিত বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে নগরের পিএন সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে ছিলেন রাবিয়া ইসলাম। পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগে তিনি তাঁর মোবাইল ফোন থেকে প্রশ্ন দেখে উত্তর বলে দিচ্ছিলেন একজন পরীক্ষার্থীকে। রাবিয়ার হাতেও উত্তর লেখা ছিল। পরে অন্য অভিভাবকেরা তাঁকে কৌশলে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, আটক মেয়েটির মুঠোফোনের প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার ৩০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নই মিলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যশোর
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে যশোর জিলা স্কুলের সামনে থেকে আটক এক গৃহশিক্ষককে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই শিক্ষকের নাম মো. মনিরুজ্জামান (২৮)। তিনি যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ছাত্র। শহরের বেজপাড়া এলাকার একটি ছাত্রাবাসে গৃহশিক্ষক হিসেবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পড়াতেন তিনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে জিলা স্কুল কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে প্রশ্নপত্র দেখাচ্ছিলেন মনিরুজ্জামান। এ সময় তাঁকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে ওই যুবককে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়।
যশোর জিলা স্কুল কেন্দ্রের সচিব আব্বাস উদ্দিন বলেন, ওই যুবকের কাছে ক সেটের প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। তবে পরীক্ষা হয়েছে খ সেটে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম আবু নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ওই যুবককে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শহরের মাধবপুর এলাকায় মডেল গার্লস ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকের সামনে সোলায়মান হোসেন নামের এক যুবকের গতিবিধি দেখে সন্দেহ হলে পুলিশ তাঁকে মোবাইল সেটসহ আটক করে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রে কর্তব্যরত নির্বাহী হাকিম মো. রায়হানুল ইসলামের কাছে। পরে তাঁর মোবাইলে আজকের মূল প্রশ্নের এমসিকিউ অংশের ৩০টি প্রশ্ন ও তার উত্তর পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে সোলায়মান বলেন, এসব প্রশ্ন ও উত্তর বন্ধুর স্ত্রীকে দিতে এসেছিলেন তিনি।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আটক সোলায়মানের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে সদর থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
গাজীপুর
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি কেন্দ্রে মোবাইল ফোনে গণিতের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন পরীক্ষার্থী ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ছয় শিক্ষার্থীকে এক পরীক্ষার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আটককৃত শিক্ষকেরা হলেন চুপাইর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমার দেবনাথ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম। আটক পরীক্ষার্থীরা হলো প্রণয় দাস, সঞ্জয় শীল ও সজীব দাস। এই তিনজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, নোয়াপাড়া মায়েজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রণয় দাস নামের এক পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পরে ওই মোবাইল ফোনে গণিতের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই কক্ষ থেকে আরও আটজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। ওই কক্ষের দায়িত্বে ছিলেন চুপাইর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিব কুমার দেবনাথ ও জাঙ্গালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ হোসেন বলেন, ওই দুই শিক্ষক ও তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ছয় শিক্ষার্থীকে আজকের পরীক্ষার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলম চাঁদ বলেন, আটক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দুই শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের মাঠে পরীক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলে প্রশ্ন ফাঁস করার সময় তাঁদের আটক করা হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষকেরা হলেন বক্সনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রনি মিয়া ও বাহ্রা ওয়াছেক মেমোরিয়াল হাইস্কুলের শিক্ষক সোহেল রানা। এর মধ্যে সোহেল রানা নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ১১ নম্বর কক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফা কামাল বলেন, সকালে কেন্দ্রের সামনের মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস করার খবর পাওয়া যায়। পরে সোহেল ও রনির মোবাইল ফোনে গণিত পরীক্ষার খ সেটের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মামলা করা হবে। রিমান্ড চেয়ে আগামীকাল রোববার ওই দুই শিক্ষককে আদালতে পাঠানো হবে।