গতকাল শনিবার নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ রোববার সকালে প্রথা অনুসারে তাঁকে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় বিভাগের বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের সমাজে তোষামোদ ও অন্যায় দেখে চুপ করে থাকা স্বাভাবিক রীতিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা অনেক বিচারপতির মুখের ওপর তাঁর খারাপ জিনিস ধরিয়ে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হই। সমালোচনা না করে তোষামোদে লিপ্ত হই।’ প্রখ্যাত দুজন আইনজীবীর (এম এইচ খন্দকার ও সবিতা রঞ্জন পাল) কথা টেনে তিনি বলেন, তাঁরা কখনো বিচারকদের তোষামোদ করেননি। বিচারকেরা তাঁদের সমীহ করতেন। তাঁদের মতো ভূমিকা এখন আর কাউকে নিতে দেখা যায় না।
ইতিমধ্যে আদালতের রায় নিয়ে জালজালিয়াতি শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ মাহবুবে আলম বলেন, ‘আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়নি। অথচ জামিনের কাগজ তৈরি করে আসামিরা জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তি আদালতের কাজে আরও ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
ঢালাওভাবে হাইকোর্টের সব বেঞ্চের জন্য এ কথা বলছেন না জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনেক বিচারক বিচারকার্য হাতের মুঠোয় রেখেছেন। আদালতের কর্মকর্তারা তাঁদের কথামতো কাজ কতে বাধ্য হচ্ছেন। সঠিকভাবে আইনজীবীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কতিপয় বিচারপতির আদালত চালানোর অব্যবস্থা দ্বারা সমস্ত বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কারণ, সুগন্ধের পরিধি হয় সীমিত আর দুর্গন্ধের পরিধি হয় বিস্তৃত।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আদালতের ভাবমূর্তি উন্নত করা, বিচারকাজকে গতিশীল করা, দেশের বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা, বিচারকাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য এবং বিচারক ও আইনজীবী মঙ্গলের জন্য আপনি যেসব পদক্ষেপ নেবেন, সেখানে আমরা আপনাকে নিঃশর্ত সমর্থন করব। আমাদের প্রত্যাশা, আপনি এগিয়ে চলুন। আমরা থাকব আপনার সাথে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমাদের বিচার বিভাগের অবক্ষয় ঘটেছে। সাধারণ জনগণের কাছে আদালতের যে ভাবমূর্তি ছিল, তাতে পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিপূর্বে একজন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় আদালতের অবক্ষয়ের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলাম। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তদন্তের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তদন্ত অনেকটা অগ্রসরও হয়েছিল, কিন্তু যখন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এলেন, ওনার দপ্তর থেকে সেই ফাইলটা নিখোঁজ হয়ে গেল।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাহবুবে আলম বলেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন এই আদালতে ঢুকেছিলাম, তখন একজন বেঞ্চ অফিসারের বিরুদ্ধেও কোনোরূপ বিরূপ মন্তব্য শুনিনি। কিন্তু জেনারেল এরশাদের আমলে আদালত বিকেন্দ্রীকরণের নামে যখন হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ ঢাকার বাইরে গেলেন, আবার অষ্টম সংশোধনীর মামলার রায়ের পর যখন ফিরে এলেন, তখন আর সেই আগের অবস্থা রইল না। আদালত ফিরলেও বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার চোরাবালিতে আটকা পড়ল এই প্রতিষ্ঠান।’