নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও খুন হওয়া সাতজনের লাশের সঙ্গে বাঁধা বস্তায় ইট ভরার ‘দায়িত্বে’ ছিলেন র্যাব-১১-এর তৎকালীন সদস্য মো. নুরুজ্জামান। বস্তায় ইট ভরার পর র্যাবের অন্য সদস্যরা লাশের সঙ্গে বেঁধে লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন। অপহরণের শুরু থেকে লাশ ডোবানো পর্যন্ত নুরুজ্জামান ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নুরুজ্জামান আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানান। বেলা একটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ সিদ্দিকীর খাসকামরায় পৃথক দুটি মামলায় এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি কে এম ফজলুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে মাগুরা থেকে নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নুরুজ্জামান জানান, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অনুসরণ করতে মেজর আরিফ হোসেনের নির্দেশে ২৭ এপ্রিল সকাল আটটায় নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় সাদা পোশাকে যান নুরুজ্জামানসহ র্যাবের আরেক সদস্য। তাঁরা আদালত পাড়ার আলাদা আলাদা পয়েন্টে অবস্থান নেন। কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের অনুসরণ করতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁদের (র্যাব) একজনকে নজরুলের লোকজন আটক করে ফেলেন। তখন তিনি নিজেকে র্যাবের সদস্য পরিচয় দিলে তাঁকে ছেড়ে দেন।
কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা আদালতে মামলার হাজিরা দিয়ে একটি এক্স করোলা সাদা প্রাইভেট কারে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা একটি মাইক্রোবাসে তাঁদের অনুসরণ করতে থাকেন এবং মোবাইল ফোনে মেজর আরিফ হোসেনকে বিষয়টি জানান।
নুরুজ্জামান আরও জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশের ফতুল্লার স্টেডিয়ামের অদূরে র্যাবের চেকপোস্টে নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারের প্রাইভেট কার সিগন্যালে থামায়। এ সময় নজরুলসহ অন্যদের তিনিসহ (নুরুজ্জামান) র্যাবের অন্য সদস্যরা গাড়ি থেকে বের করে র্যাবের মাইক্রোবাসে তোলেন। তাঁদের নিয়ে নরসিংদীর দিকে চলে যান। পরে মেজর আরিফের নির্দেশে মাইক্রোবাসেই র্যাবের অন্য সদস্যরা নজরুলসহ সাতজনকে ইনজেকশন পুশ করে ও মাথায় পলিথিন প্যাঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি ওই মাইক্রোবাসে ছিলেন। পরে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে গুমের জন্য ইট বেঁধে ভরার দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরুজ্জামানকে। তিনি বস্তায় ইট ভরার পর র্যাবের অন্য সদস্যরা লাশের সঙ্গে তা বেঁধে লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও পরদিন ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তাঁর জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অন্য একটি মামলা করেন ফতুল্লা থানায়।
গ্রেপ্তার র্যাবের সদস্য নুরুজ্জামানসহ সাত খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাবেরই ১৫ জন। – প্রথম আলো