টার্গেট বিএনপির সক্রিয় নেতারা। পুলিশ-গোয়েন্দারা সেই তালিকা ধরেই মাঠে নেমেছে। এসব নেতা কে কোথায় অবস্থান করছেন সে তথ্য নিয়েই তারা কাজ করছে। পরে যাতে কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম দানা বাঁধতে না পারে সেই টার্গেটেই নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। এ দিকে গতকালও রমনা ও শাহবাগ থানা, ডিবি কার্যালয় এবং আদালত চত্বরে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনদের ভিড় লক্ষ করা যায়। অনেকেই গতকালও তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।
বিএনপি দাবি করেছে, এরই মধ্যে তাদের প্রায় তিন শ’ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। গতকালও গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গতকাল বলেছেন, গত চার দিনে তাদের পৌনে তিন শ’ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। একাধিক সূত্র বলেছে, এরই মধ্যে যেসব নেতা গ্রেফতার হয়েছেন তারা দলের জন্য খুবই সক্রিয়। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও আনিসুর রহমান খোকন, সাভারের সাবেক পৌরমেয়র কেফায়েত উল্লাহ, মহিলা দলের রাজিয়া আলিম, পেয়ারা মোস্তফা, মহানগর নেতা হাজী শফিকুল ইসলাম রাসে ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেক নেতাকর্মী।
একাধিক সূত্র বলেছে, এরই মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা সবাই সক্রিয় এবং দলের জন্য নিবেদিত। পুলিশ এই শ্রেণীর নেতাকর্মীকে টার্গেট করেই মাঠে নেমেছে। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, পুলিশ টার্গেট করে এই গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। এর আগে পুলিশ ও গোয়েন্দারা সক্রিয় নেতাকর্মীদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করেছে। এখন ওই তথ্যানুযায়ী অভিযান চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শান্তিনগর এলাকার এক বিএনপি কর্মী বলেন, পুলিশ তার বাসায় গত চার দিনে সাতবার তার খোঁজে গেছে। তাকে খুঁজতে তার আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও গেছে। জুরাইন এলাকার আরেক নেতা বলেন, তার বাসায় গেছে তিনবার। এভাবেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বেশির ভাগকে হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় পুলিশের ওপর হামলাসহ ওই দিনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোয় আসামি করা হচ্ছে। যারা এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন তাদেরকে এ মামলায়ই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এ দিকে যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের অনেকের পরিবার পর্যন্ত থানায় বা আদালতে যাচ্ছেন না ভয়ে। নিজের ভাইকে ওষুধ সরবরাহের জন্য গত বুধবার রাতে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে যান অমিতের ভাই সুমিত। পুলিশ সেখান থেকে সুমিতকেও ধরে নিয়ে যায়। সুমিতের পরিবার দাবি করেছেন, অমিত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তার বড় ভাই সুমিত কোনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। তারা বিএনপির সিনিয়র নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে। সুমিত গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রেফতার হওয়ার নেতাকর্মীদের স্বজনদের মধ্যেও ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এখন অনেকেই ভয়ে থানা বা আদালতে যাচ্ছেন না গ্রেফতার হওয়া স্বজনের খোঁজে। যারা যাচ্ছেন তারাও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন। গতকাল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি আদালত চত্বরে বলেন, অতিকষ্টে তার ছোট ভাইকে শীতের পোশাক সরবরাহ করেছেন। শীতের পোশাক ছাড়াই এক রাত তাকে থানা হাজতে কাটাতে হয়েছে।
এ দিকে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে, কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকেই কেবল গ্রেফতার করা হয়েছে।