শাহ মতিন টিপু : ২৩তম আন্তর্জাতিক ও ১৬তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের একটি অনন্য চমক এই যে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, ঠিক তখনই বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বুলেট কথা বলছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল প্রথম বারের মত অংশ নিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরে।
ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের (ডব্লিউবিসিবি) আয়োজনে এই বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ গ্রহণ করছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
সব নাগরিকের জন্য সমঅধিকার ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার উল্লেখ রয়েছে দেশের সংবিধানে। তবে তা প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে কার্যকর কতটুকু? এমনকি প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। এর মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবকাঠামোগত অসুবিধা। সরকারি-বেসরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র বা অফিসে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী কোনো সুবিধা না থাকায় তারা হারাচ্ছেন তাদের অধিকার। এমন পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আমাদের মনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।
যে পরিবারে একজন প্রতিবন্ধী সন্তান আছে, কেবল সে-ই বোঝে এর যাতনা। সেসব যাতনাভোগী পরিবার প্রতিবন্ধীদের কোন সুখবরে ভীষণ আশান্বিত হয়। এবারের প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হচ্ছে ‘টেকসই উন্নয়ন : প্রযুক্তি প্রসারণ’ প্রতিপাদ্যে । দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ’উন্নত ও সুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করে মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা জরুরি।’
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ প্রণয়নসহ বর্তমান সরকারের বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।’
দেশের জনসংখ্যার একটি অংশ প্রতিবন্ধী। তাদের জনশক্তিতে রূপান্তরে সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে যেসব সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার তার বেশির ভাগই অনুপস্থিত। ফলে প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার বিষয়টি বর্তমানে আন্তর্জাতিক দিবস পালন এবং বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত একটি আইন রয়েছে বলা ছাড়া এর বাস্তবায়ন নিয়ে খুব বেশি বলার কিছু নেই। প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা এবং কিছু প্রকল্প নিয়েই ব্যস্ত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর ৩৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, গণস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশ নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, ১৯৫২ ও প্রণীত বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এখানে গণস্থাপনা বলতে সর্বসাধারণ চলাচল করে এমন সব সরকারি-বেসরকারি ভবন, পার্ক, স্টেশন, বন্দর, টার্মিনাল ও সড়ক।
মূলত প্রতিবন্ধীদের অবকাঠামোগত সুযোগ সংবলিত ভবন বলতে বোঝানো হয় যেখানে র্যাম্প (যার ওপর দিয়ে হুইল চেয়ার যাতায়াত করবে), ব্রেল (দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যার মাধ্যমে লেখা বুঝতে পারে) উপযোগী ফ্লোর থাকবে। অথচ ক্ষুদ্র হলেও এসব অবকাঠামো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তো নেই-ই, এমনকি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নেই।
জানা গেছে, সরকার পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার প্রাইমারি ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্থাপন করা হবে র্যাম্প সুবিধা। কিন্তু বিষয়টি পরিকল্পনায়ই সীমাবদ্ধ আছে। কিছু প্রাইমারি স্কুলে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলেও, বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তা ব্যবহার অনুপযোগী ।
অভিযোগ আছে, দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট রয়েছে, আইন রয়েছে কিন্তু শুধু তদারকির অভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকার ১০ হাজার বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিলেও, তা বাস্তবায়ন হয়েছে সর্বোচ্চ ১০০টি ভবন নির্মাণে। অনেক জায়গায় হুইল চেয়ার চলাচলের র্যাম্পের আকার ছোট, যা দিয়ে হুইল চেয়ার চলাচল অসম্ভব। এ রকম অনেক ত্রুটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ভবনগুলো, যা প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত নয়।
দেখা যায়, রাজধানীর বেশির ভাগ বাজার, শপিংমল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিক, সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো, রেল বন্দর, বাস টার্মিনালে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো অবকাঠামো নেই। ফলে প্রতিবন্ধীদের এ স্থানগুলোয় কোনো কাজে যেতে হলে অন্যের সহায়তা লাগে।
সচিবালয়ের কিছু ভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু ভবনে র্যাম্প থাকলেও সেটিতে প্রবেশের স্থান গাড়ি ও মোটরসাইকেল দিয়ে আটকানো থাকে। ফলে কোনো প্রতিবন্ধী দর্শনার্থী এলে তাদের মূল ফটক দিয়েই বিকল্পভাবে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
রাজধানীর নামকরা স্কুল ভিকারুননিসায়ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো অবকাঠামো নেই। দু-একজন যারা প্রতিবন্ধী আছে তারা স্কুলের সহকারীদের সহায়তাই চলাচল করে।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দশ ভাগ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার। এদের মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, শ্রবণ, ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা, আগুনে পোড়া ও নানা অসুখ ও দুর্ঘটনায় পঙ্গু ব্যক্তিদের ধরলে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা বিশ শতাংশেরও বেশি হবে। সমাজের এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে সমাজ ও উন্নয়নের মূলস্রোত থেকে বাইরে রাখলে দেশ সমৃদ্ধ হবে না। তাছাড়া রাষ্ট্র, সংবিধান ও মানবাধিকার অনুসারে এদের অধিকার ও মর্যাদা না দিলে মানবিক সমাজ গঠনও সম্ভব হবে না।
প্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন সুবিধা খুবই সীমিত। দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরির সুযোগ ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করে দেয়ার আরো বিপুল আয়োজন থাকা চাই এবং এই কাজ উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা বাঞ্ছনীয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক বাজেট, পৃথক অধিদফতর প্রয়োজন।
আমাদের পরিবার, সমাজ এখনো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। নিজের পরিবারেই তাদের করুণ ও অসহায় জীবন যাপন করতে হয়। মহিলা প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরো অসহনীয়, নানা নিগ্রহের শিকার তারা। সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোটা রয়েছে, সকল ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠানেও অনুরূপ সুযোগ সৃষ্টি বাঞ্ছনীয়। প্রতিবন্ধীরা যাতে ভাতা পেতে পারে, তারা যেন পরিবারের গলগ্রহ হয়ে না থাকে সে ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা : প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞায় কাদের ফেলবো? আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর মতে ‘একজন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন তিনি, যার স্বীকৃত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কমে যায়।’
আবার জাতিসংঘের ৩৭তম সভায় গৃহীত সংজ্ঞানুযায়ী ‘প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে, এমন কোনো বাঁধা বা সীমাবদ্ধতা (শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উদ্ভূত) যা একজন মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে পূর্ণভাবে ব্যাহত করে।’ অপর দিকে প্রতিবন্ধিতার কারণে ব্যক্তি যদি সামাজিক নেতিবাচক মনোভাব ও কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার দরুন স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধার সম্মুখীন হয়, তবে তাকে আমরা Handicapped বা সামাজিক প্রতিবন্ধী বলতে পারি ।
প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলো হচ্ছে: ১. অটিজম, ২. চলনপ্রতিবন্ধিতা, ৩. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, ৪. দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, ৫. বাক্প্রতিবন্ধিতা, ৬. বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, ৭. শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, ৮. সেরিব্রাল পালসি, ৯. বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও ১০. অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ভাবে প্রতিবন্ধীতার শিকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আচরণগত বাধার সম্মুখিন হয়। ফলে তারা সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের মত কার্যকরী ও পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহনকারী হিসেবে অন্যদের মতো আত্মপ্রকাশ করতে পারে না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে অবহেলিত ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত। তাদের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের জীবনযাত্রার মানও অতি নিম্ন। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সকলকে। তাদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পরিবারভিত্তিক সেবা ও কমিউনিটিভিত্তিক পুনর্বাসনের বিস্তার ঘটাতে হবে এবং এসব ক্ষেত্রে সহায়তা ত্বরান্বিত করতে হবে। পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে হবে, যেন তারা প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনযাপনের জন্য যে বাড়তি খরচ হয়, তা মেটাতে পারে এবং আয়ের হারানো সুযোগ ফিরে পেতে পারে।
একথা সকলকে স্বীকার করতে হবে যে, কোন না কোন ভাবে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোন পরিবারে বেশি, কোন পরিবারে কম। অবহেলার দরুণ হতাশা, দুর্দশা, দারিদ্র্যতার অভিশাপ নিয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে। যেখানে ৮০ ভাগই জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে বলে ঠিক মতো তিন বেলা খাবার জোটে না। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা আরো গুরুতর। অনেক সময় অনাহারে জীবন কাটাতে হয় অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের।
নির্মম সত্য এই যে, অনেক পরিবারে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুর্দশা ও কষ্ট দেখে মহান আল্লাহর কাছে প্রতিবন্ধী সন্তানের মৃত্যু কামনা করে। অনেক পরিবারে নারীর ওপর দোষ চাপিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তান ও তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
অতি দরিদ্র্য পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশু বা ব্যক্তিকে আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য করে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করে। আবার ধনী পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরো লাঞ্ছিত, অপমানিত, দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারা পরিবারে পরিচয় দিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী সন্তানটির কথা মোটেও ভাবে না অর্থাৎ গোপন রাখে। সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার কথাতো চিন্তা করাই যায় না অনেক সময়। আর্থিক সঙ্কট না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে দ্বিধাবোধ করে। যৌবন বয়স অতিক্রম করলেও বিয়ের খোঁজ রাখে না। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ক্ষেত্রে কোন অধিকার দেওয়া হয় না পরিবার থেকে।
আশার অলো :স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে যেমন অবহেলার শিকার তেমনি স্থানীয় ভাবে অনেকে বৈষম্যের শেকল ভেঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে। অনেক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান হয়ে বিভিন্নভাবে সমাজে অবদান রাখছে। কেউ শিক্ষকতা করছে, ব্যবসা করছে, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পরিচালনা করছে, কৃষি কাজসহ নানা কাজ করছে। প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-শুনা করছে। একটি উদাহরণতুল্য ঘটনা হচ্ছে, ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এককভাবে অংশগ্রহণ করে ১৬ জনই বিজয়ী হন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঘর থেকে বের হওয়া খুব কষ্টকর ও লজ্জার ধ্যান ধারণা ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। যেমন: অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা প্রদান কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের উপ-বৃত্তি প্রদান জেলা স্টিয়ারিং কমিটিতে প্রতিবন্ধী নারী ও প্রতিবন্ধী পুরুষ উভয় সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অনেক স্থান প্রবেশগম্য করে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন দিবসে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের সমস্যা সম্বন্ধে তুলে ধরতে পারছে।
বর্তমানে জাতীয় পর্যায়েও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেক এগিয়ে চলেছে পূর্বের তুলনায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অবস্থানকেও খুব খাটো করে দেখার অবকাশ শেষ হয়েছে অনেক আগে। বর্তমানে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রতিনিধি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের কথা তো শুরুতেই উল্লেখ করেছি।