অতি সংগোপনে পশ্চিম রেলের অফিসার্স কোয়ার্টারের কোটি টাকা মূল্যের অর্ধশত মেহগনি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে! প্রকাশ্যে নিলাম না করে গত এক মাসে ৩০ বছরের পুরনো এসব মেহগনি গাছ গোপনে কাটা হয়। এই কাঠে ফার্নিচার বানাতে দিয়েছেন পশ্চিম রেলওয়ের কয়েক কর্মকর্তা।
শুধু তাই নয়, আলামত নিশ্চিহ্ন করতে মূলকাণ্ড উপড়ে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি গাছ কেটে ফেলার জন্য যে গর্ত তৈরি হয় সেগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। কয়েকটি গাছের গুঁড়ি পুড়িয়েও আলামত নষ্টের চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার শ্রীরামপুরের রেল কলোনি স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা সরেজমিন গিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখা গেছে। তবে গাছ কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কিছুই স্পষ্ট করেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর শ্রীরামপুরের রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় র্যাব-৫ এর ক্যাম্প ছিল। বছর তিনেক আগে র্যাব-৫ এর সদর দফতর নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকায় স্থানান্তর হলে কোয়ার্টারগুলোতে পশ্চিম রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্য কর্মকর্তারা বসবাস করছিলেন। এলাকাবাসীসহ রেলওয়ের কর্মচারীরা জানান, কিছুদিন আগে থেকে রেল কলোনি নামে পরিচিত স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্পাসে থাকা পুরনো মেহগনি গাছগুলো একটি-দুটি করে কাটা শুরু হয়। গাছগুলো কাটার সময় কোয়ার্টারের মূল ফটক বন্ধ রাখা হতো। এভাবে গত এক মাসে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকা প্রায় অর্ধশত মেহগনি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এসব গাছ কেটে নিয়ে কর্মকর্তারা বাসাবাড়ির ফার্নিচার তৈরি করেছেন। কেউ কেউ এসব গাছের কাঠ দিয়ে এখনো ফার্নিচার বানাচ্ছেন।
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে আরও দেখা গেছে, মেহগনি গাছগুলোর গোড়া থেকে কেটে নেওয়ার পর মূলকাণ্ডসহ উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোপাট করা গাছের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ সম্ভব হয়নি। কোয়ার্টারে বসবাসরত কয়েকজন কর্মচারী জানান, কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে মেহগনি গাছ কাটা হয়েছে রাতে। এ সময় মূল ফটক বন্ধ রাখা হতো। কেটে নেওয়া গাছের সংখ্যা জানার জন্য গাছের গুঁড়ির ঢেকে দেওয়া অংশ শুক্রবার দুপুরে গুনে ৫৮টির চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রমাণ ঢাকতে গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এজন্য কিছু চিহ্ন হারিয়ে গেছে। এ কারণে কেটে নেওয়া গাছের প্রকৃত সংখ্যা কত তা বের করা সম্ভব হয়নি। আর কিছু বড় মেহগনি গাছের বড় কাণ্ড কেটে নেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পশ্চিম রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ৩০ বছর আগে শ্রীরামপুরে এ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। আর কেটে নেওয়া মেহগনি গাছগুলো ওই সময় লাগানো হয়েছিল। এ হিসেবে গাছগুলোর বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর। গাছগুলোর একেকটির আনুমানিক দাম এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। ফলে অর্ধশত মেহগনি গাছের দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মচারীরা জানান। এদিকে রেল কলোনির এই স্টাফ কোয়ার্টারসহ অভ্যন্তরে থাকা সব সম্পদ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী নাজিত কায়সার বলেন, ‘এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কিছু বলব না। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে রেলভবনে আমার দফতরে এসে যোগাযোগ করতে হবে।’
বিনা দরপত্রে গাছ কাটা এবং কাটার আগে বন বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়েছিলে কিনা- জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘মেহগনি গাছ কাটার বিষয়টি সম্পর্কে জিএম ও প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।’
বিপুল সংখ্যক মূল্যবান মেহগনি গাছ কাটা প্রসঙ্গে রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রেল কোয়ার্টারের মেহগনি গাছ কাটার ব্যাপারে বন বিভাগের কিছু জানা নেই। সরকারি বিধি অনুযায়ী, গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের কাছে আগে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ গাছের সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে মূল্য নির্ধারণের পর কাটার অনুমতি দেয়। তবে এ ধরনের কোনো আবেদন পশ্চিম রেলের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে পশ্চিম রেলের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এ ব্যাপারটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে পশ্চিম রেলওয়ের জিএম খায়রুল আলম ও প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।