জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় দেখে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। একই সাথে দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার কোনো ষড়যন্ত্র হলে সেই নির্বাচন বয়কট করার ব্যাপারে দলটির নীতিনির্ধারকেরা একমত হয়েছেন।
গুলশান কার্যালয়ে গতকাল শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বেগম খালেদা জিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। এই রায় নিয়ে আইনি ও রাজনৈতিক পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠক ডাকা হয়। রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে পৌনে ১২টায় বৈঠক শেষ হয়। তবে বৈঠকটি মুলতবি করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার আবার এ বৈঠক হবে। এর আগে আজ রোববার ২০ দলীয় জোটের সাথে বৈঠক করবেন বেগম খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এ েেত্র সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে সারা দেশে তাৎণিক তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা বলেছেন কোনো কোনো নেতা।
বৈঠক সূত্রে আরো জানা গেছে, মামলার রায়ের তারিখ সামনে রেখে দলের নির্বাহী কমিটির একটি সভা ডাকা হতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে দলীয় নেতাদের পরামর্শ নেয়া হবে।
এ দিকে খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে ‘তড়িঘড়ি’ করাকে ‘সরকারি ষড়যন্ত্র’ দাবি করে এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বৈঠকের ফাঁকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, এই রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতি আজ উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সরকারের আইন-আদালতের নিয়মনীতির বিরোধী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
বৈঠকে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা জানাব রায় ঘোষণা হওয়ার পরে। পুরো বিষয়টা আমরা আবার জানাব রায় ঘোষণা হলেই।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৫ জানুয়ারি বিশেষ জজ আদালতে বিবাদি পরে আইনজীবীদের বক্তব্য হঠাৎ সমাপ্ত করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতে তখন উপস্থিত আমাদের প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, এমন ঘটনা শুধু অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত নয়, রহস্যজনক। এটা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও দেশনেত্রীকে নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার অপচেষ্টার অংশ বলেই দেশবাসী মনে করে।’
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে কয়েকদিন ধরে সরকারের মন্ত্রীরা এবং বিশেষ দূত এই মামলার রায় এবং তার সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার বিষয়ে সরকার ও সরকারি দলের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা যে ভাষায় বলে চলেছেন তাতে প্রমাণিত হয়- মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার ও সরকারি দলের জানা আছে।
ফখরুল বলেন, জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসন এবং বিরোধী পকে দমন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার আরেকটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নিয়ে মতাসীন দলের এমন আচরণে দেশের জনগণ আজ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।