বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর পরবর্তী করণীয় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কাগজপত্র, সাী, তথ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নেয়া হলে এ মামলায় খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন- এমনটাই আশা করছেন সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীরা। তবে তাদের শঙ্কা অন্যত্র। নেতারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এ মামলাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রে শুধু আইনি লড়াইয়ের ওপর নির্ভর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।
মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামলার রায় নিয়ে দলে দুই ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যদি বিএনপি প্রধানকে সাজা দেয়া হয় তাহলে রায়-পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং রাজনৈতিকভাবেও এটি মোকাবেলা করা হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর বকশীবাজার ঢাকা আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য আব্দুর রেজাক খান মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর বলেছেন, এ মামলাটি সারবত্তাহীন। রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। কোনো এভিডেন্সেই মামলাটি প্রমাণিত হয়নি। কুয়েত থেকে আসা অর্থে খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতাও প্রমাণ হয়নি। তাই তিনি এ মামলার সব আসামিকেই সসম্মানে বেকসুর খালাস দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হতে পারে এমন আভাস থেকেই গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। সব বৈঠকে আলোচনা হয়েছে রায়-পরবর্তী করণীয় নিয়ে।
জানা গেছে, যদি বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা হয়, সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করা হবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে, যাতে নি¤œ আদালতে সাজা হলেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আইনগত কোনো বাধা না থাকে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেও সংগঠনের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাজা হলে রাজপথে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে দলটির শীর্ষ এক নেতা জানান।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, যদি সুবিচার হয় তাহলে এই মামলায় খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন। রাজনৈতিকভাবে সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিকভাবেই সেটি মোকাবেলা করা হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নিরপেক্ষভাবে বিচার করা হলে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণভাবে খালাস পাবেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, মামলার বিচার যদি আইনের স্বাভাবিক গতিতে যায়, তাহলে বিএনপি প্রধানের জেল হওয়ার কারণ নেই। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে আদালতের ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়া এ মামলায় খালাস পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
সাজা হলে নির্বাচন করতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জমির উদ্দন সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত আইন যা আছে, তাতে আপিল করলে জামিন পাবেন এবং জামিন পেলেই নির্বাচন করতে পারবেন। আপিলটা ট্রায়াল কোর্টের কন্টিনিউয়েশন। আপিল কোর্টে যা হবে, সেটাই ফাইনাল। যতক্ষণ না ফাইনাল হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জেল হয়নি। জেল হিসেবে কাউন্ট হবে জাজমেন্টের পর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিকেরা রায়ে বিএনপি প্রধানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হলে রাজপথে নামার কথা ভাবছে। ক্ষমতাসীন মহাজোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোও খালেদা জিয়ার মামলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এ দিকে কূটনৈতিক পর্যায়েও মামলার গতিবিধি সম্পর্কে আপডেট রাখা হচ্ছে। মামলা নিয়ে দলের সংশয়ের কথা জানানো হচ্ছে তাদের।