গহিন জঙ্গলে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে শফিকুল ইসলাম ওরফে শামছুল হক ওরফে বাবুল ওরফে মলম বাবু ওরফে ডাকাত লিতু নামের (২৮) একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার রাতে মিরপুরের এফ ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, এই চক্রের একাধিক সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। এরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কৌশলে ব্যবসায়ী এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, শাহআলীর রাইনখোলায় ‘রাহাত থাই অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড গ্লাস হাউস’ এর মালিক আরিফ খান। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলা সদরের সিংরাই এলাকায়।
আরিফ শাহআলী থানায় অভিযোগ করেন, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর দুপুরে বাবুল (২৮) নামে এক ব্যক্তি তার দোকানে এসে গাজীপুর চন্দ্রা মহিলা ক্যাডেট কলেজের পেছনে একটি বাড়িতে থাই গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়ামের কাজের কথা বলে। ৩ দিন পর ৮ ডিসেম্বর বাবুল তার দোকানে এসে থাই গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়ামের দামাদামি করে যায়। ছুটি পেলে আরিফকে তার গ্রামের বাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের মেজারমেন্ট করতে নিয়ে যাবে বলে জানায়। এর প্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর বাবুল আবারও তার দোকানে এসে গ্লাসের কাজ করানোর কথা বললে তিনি এবং তার মিস্ত্রি সোহাগ খলিফাকে (২৭) সাথে করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। কয়েক দফায় যানবাহন পরিবর্তন করে চন্দ্রার পরিবর্তে তাদের নিয়ে যায় একটি জঙ্গলে।
আরিফ আরও জানান, ওখানে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা বাবুলের সহযোগীরা আরিফ ও সোহাগকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে ফেলে। অপহরণকারীরা তাদের হাত-পা বেঁধে মারধর করে। তাদেও লোহার রড ও চাপাতির বাট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আরিফের সঙ্গে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোনসেট কেমড় নেয়। পরে ভিকটিমদের মোবাইলফোন দিয়ে তাদেরই স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মুক্তিপণের জন্য বিকাশের মাধ্যমে ৮৫ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, মুক্তিপণ পাওয়ার পর অপহরণকারীরা আরিফ ও সোহাগের হাত-পা ও চোখ বেঁধে জঙ্গলের পৃথক স্থানে ফেলে রেখে যায়। পরে পথচারীদের সহযোগিতায় মোবাইলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা বাসায় ফেরেন। পরে ১৯ ডিসেম্বর আরিফ খান বাদী হয়ে শাহআলী থানায় মামলা (মামলা নম্বর-৭) করেন। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুরের একটি বাসা থেকে এ চক্রের প্রধান শফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, শফিকুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এ চক্রটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। পরে গহিন জঙ্গল অথবা পরিত্যক্ত ভবনে ভিকটিমদের ফেলে চলে যায়। চক্রটি কখনো বাসের সাধারণ যাত্রী সেজে গাডিতে উঠে পথে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসযাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়। শফিকুলের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় খুন, ডাকাতি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার মামলা রয়েছে। এ চক্রের আরও একাধিক সদস্যকে চিহ্নিত করা গেছে এবং তাদেরকেও গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।