গাজীপুর আইইউটির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

Slider শিক্ষা

DSC01824মো:আলীআজগর পিরু:
গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি (আই.ইউ.টি) ফ্যাকাল্টি অ্যান্ড স্টাফ মেম্বার ও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে ভিতরেই বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ চলাকালিন সময় দুপুর ১২.৩০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড.মুনাজ আহমেদ নূর বহনকারী প্রাইভেটকারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ফটক বন্ধ থাকায় ভিতরে প্রবেশ করতে পাড়েনা। প্রায় ২ঘন্টা ওই গাড়িতে অবস্থানের পর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যান। এ সময় গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর শাখাওয়াত হোসেনসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যদেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

আইইউটি’র ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.তসলিম রেজা ও মেকানিকাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.মো.হামিদুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ও.আই.সি) এর একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি (আই.ইউ.টি)’র ফ্যাকাল্টি মেম্বারগণ, স্টাফ মেম্বারগণ ও শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ২০১৬ সালে আই.ইউ.টি’র উপাচার্য হিসেবে ড.মুনাজ আহমেদ নূর যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির মর্যাদা ও গুণগতমান উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে। উপাচার্যের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং আই.ইউ.টি এবং ও.আই.সি’র যথাযথ নিয়মকানুন পালনে উপাচার্যের চরম অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। একজন যোগ্য পরিচালক হিসেবে এরকম একটি ঐতিহাসিক এবং মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে দিন দিন উপাচার্যের আচরণ অশোভন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব বিভিন্ন অভিযোগ লিখিত ভাবে গত বছরের নভেম্বরে ফ্যাকাল্টি অ্যান্ড স্টাফ মেম্বার, শিক্ষার্থী ও স্টাফ মেম্বারগণের পক্ষ থেকে ও.আই.সি’র মহাসচিবকে জানানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ও.আই.সি’র প্রতিনিধিদের নিয়ে তিন সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে। এই কমিটির কাছে উপাচার্যের বিগত ১৮ মাসের সংক্ষিপ্ত মেয়াদকালে তাঁর কৃত সকল অপকর্মের একটি বিস্তারিত বিবরণী পেশ করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আরো জানানো হয়, ফ্যাকাল্টি এবং স্টাফ মেম্বারদের প্রতি উপাচার্যের অপেশাদারী আচরণ, সঠিক নিয়ম ও বিধিমালা অনুসরণ না করে সহকারী সিকিউরিটি অ্যাটেন্ডেন্ট মো.রফিকুল ইসলামকে অপসারণ, অধ্যাপক ড.চে কুম ক্লিমেন্টকে বিজ্ঞান ও কারিগরি অনুষদের ডীন হিসাবে উপাচার্য ঘোষণা করেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত হননি। আই.ইউ.টি’র সিনিয়র ড্রাইভার আলমকে তার পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। চুক্তি শুরুর তারিখের পরে চুক্তি পুনরায় নবায়ন করা হয়েছে। কোন সঠিক কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্মচারীদের চুক্তির মেয়ার মাত্র এক বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। রমজান মাসে মসজিদে নারী শিক্ষার্থদের জন্য তারাবীহ নামাজের ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ প্রকাশ না করেই কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়েছে। উপচার্য আই.ইউ.টি’র সম্পদের অপব্যবহার করছেন এবং প্রতিদিন দেরীতে অফিসে আসছেন।

এছাড়াও, ও.আই.সি’র জারি করা আদেশগুলো অবজ্ঞা করা, একজন নারী ছাত্রীকে হয়রানি এবং তার দুর্দশা বাড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের আবাসন সুবিধা প্রদানে যথাযথ নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করা, উপাচার্যের পছন্দের কয়েকজনকে একাধিক দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করা, অভিজ্ঞ ও প্রবীণ প্রফেসরদেরকে তাঁদের চুক্তি থেকে অব্যাহতি প্রদানসহ এড-হক ভিত্তিতে ফ্যাকাল্টি ও স্টাফ মেম্বার নিয়োগ করা হয়েছে।

অপর আরেক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, আই.ইউ.টিকে সম্পুর্ণ আবাসিক করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। নন-রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতার চেয়েও বেশি ছাত্র নেয়া, হলে সিট দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম, অপর্যাপ্ত শিক্ষক সংখ্যা, ক্লাসরুমে ধারণক্ষমতার বেশি শিক্ষার্থী, ঘন ঘন খাবার সংকট, অপর্যাপ্ত মহিলা কর্মচারী, অপর্যাপ্ত মহিলা শৌচাগার, মেয়েদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা হুট করে গত রমজানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই টিউশন ফি বৃদ্ধি, নন-রেসিডেন্সিয়াল শিক্ষার্থীদের জন্য কোন কমন রুম নেই, হরেক সংকটের পরেও শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধিসহ শিক্ষার্থীদের ইনডাস্ট্রিয়াল ট্রেইনিংয়ের ফান্ড কমিয়ে দেয়ারও অভিযোগ করা হয়।শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *