শিক্ষামন্ত্রীর পিওসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

Slider শিক্ষা

f8f1092bb710698decd7f631e90b1758-5a66acedf41c6

ঢাকা: ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন ও লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালেক হাসান মতিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবি।

গতকাল সোমবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম মৃধা। মামলা নম্বর ৩৬। বনানী থানার পরিদর্শক তদন্ত বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত রোববার রাত সাড়ে আটটায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ নাসিরউদ্দিনকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর মোতালেবকে একই সময়ে বছিলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, টাকাসহ গ্রেপ্তার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় মোতালেবকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর ডিবি গতকাল সোমবার জানায়, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুল ঘুষের বিনিময়ে চালু করে দিতে চেয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর পিও মো. মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন। এ জন্য তাঁরা স্কুলটির মালিকের কাছ থেকে ঘুষও নিয়েছিলেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি।

গ্রেপ্তারের প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুজনকে আদালতে তোলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে তোলা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে খালেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে। জঙ্গি সম্পৃক্ততায় বন্ধ হওয়া এই স্কুল চালু করে দেওয়ার নামে এই দুজন ঘুষ নিয়েছিলেন।

এই দুজনকে আদালতে না তোলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল তাঁরা বেশ কিছু অভিযান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে এ দুজনকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার করেননি তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও দৃশ্যমান ও শক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন তা আরও বাড়ছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষামন্ত্রীর পিও এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারীকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।

ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও ডিবি কাউকে ধরলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ধরে।

এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে দুই দফায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিলে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। যেকোনো অপরাধ, বিশেষ করে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম হলে তার ব্যবস্থা সরকার নেবে, মন্ত্রণালয়ের ওপর যতটুকু পড়বে, তা নেবে। তারা এখানে কাজ করে বলে মোটেই সহযোগিতা দেওয়া হবে না। মন্ত্রণালয় চাকরির বিধিবিধান অনুসারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেবে।’

শুধু মন্ত্রণালয় নয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কখনো শক্ত ব্যবস্থা নেয় না বলে সমালোচনা রয়েছে। কিছুদিন আগে ডিআইএর এক কর্মকর্তাকে ফাঁদ পেতে ঘুষসহ হাতেনাতে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই দপ্তরে আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের দপ্তরের এমএলএসএস (পিয়ন) মোহাম্মদ আলীকে ঘুষের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি ছাড়া পান। এখন তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরেই কর্মরত। শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক উঠলে এর আগে তাঁকে ঢাকায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *