প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠেই চলছে পাঠদান। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার প্রামাণিক পাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এভাবেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টি সরকারি কোন অনুদানও পায়নি। ছাত্রীদের জন্য নেই কমন রুম, এমনকি নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। তাই শিক্ষক অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে হতাশা।
এলাকাবাসী ও বেকার যুবকদের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রামাণিক পাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। স্থানীয় গণ্যমান্যদের অনুদান এবং প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের টাকায় ৬ কক্ষ বিশিষ্ট ইট ও টিন দ্বারা নির্মিত হয় দুটি ভবন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই দুটি ভবন দিয়েই চলছে এই বিদ্যালয়। ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়।
১৯৯৭ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শুরু করে। কিন্তু এতদিনেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কোন উন্নয়ন হয়নি। শ্রেণি কক্ষের অভাবে তাই মাঠেই চালাতে হয় পাঠদান। বিদ্যালয়টি পৌরসভার ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশেই গড়ে ওঠায় মাঠে বসে পাঠ নিতে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষার্থীদের।
ফলে পড়াশোনায় ভাল করার ইচ্ছে থাকলেও পরিবেশের কারণে ভাল ফলাফল করতে পারছেনা তারা। বর্ষা মৌসুমে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধই রাখতে হয়। এসময় মাঠ জুড়ে থাকে হাটু সমান কাঁদা। শুধু শ্রেণি কক্ষের সংকট নয় শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের বিজ্ঞানাগার গড়ে ওঠেনি এখনো। নেই লাইব্রেরী, নেই ভাল মানের বই।
ক্যান্টিনের অভাবে তাদেরকে স্কুলের বাইরে গিয়ে খাবার খেতে হয়। অন্যদিকে অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু তাদের বিশ্রামের জন্য কমন রুমের ব্যবস্থা নেই। নেই তাদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা। তাই আশেপাশের বাড়িতেই সারতে হয় প্রাত:কর্ম।
তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দুরের গ্রাম পাঁচপীর থেকে আসে রোজি আক্তার। সে এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সাইকেল থেকে নেমেই হাঁপাতে হাাঁপাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, আমরা যে নিজের মতো করে একটু বিশ্রাম করবো তার কোন উপায় নেই। টিফিন আনতে পারিনা। কোথায় বসে খাবো। শ্রেণি কক্ষে তো আর খাওয়া যায়না।
এদিকে অভিভাবকরা জানিয়েছেন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে চায়না। অনেক কিছু বুঝ দিয়ে স্কুলে পাঠাতে হয় তাদের। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি দু:চিন্তাও পোহাতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
অভিভাবক কাজিমুল ইসলাম জানান, আমার এক ছেলে এক মেয়ে এই বিদ্যালয়ে পড়ে। রোদের দিনে তারা আসতে চায়না। কারণ তাদেরকে মাঠে ক্লাস করতে হয়। তাদের ভাল মেধা থাকা সত্বেও পরিবেশের কারণে ভাল রেজাল্ট করতে পারছেনা। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শংকিত।
এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও শিক্ষকেরা হতাশা ব্যক্ত করে জানান, কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন করেও লাভ হয়নি। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছেও সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের অধিকাংশ আওয়ামী সমর্থিত। কিন্তু বর্তমান এমপির সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের একটি গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন জানান, সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে ঐ এমপির কাছে অনুদানের আশায় দেখা করতে যান বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মচারী ও অভিভাবক সদস্যরা। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন অনুদান পেতে হলে ঐ বিদ্যালয়ের সয়েল টেষ্ট করতে হবে। প্রধান শিক্ষক আরও জানান এ অবস্থায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আর এর প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে। এ অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।