আবার সংবাদ মাধ্যমগুলিকে আক্রমণ করলেন ট্রাম্প ।
দিনকয়েক চুপ থাকার পর এ বার মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণে নতুন হাতিয়ার ব্যবহার করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রথম সারির মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলির বড় একটি অংশকে ‘সেরা ভুয়ো খবর’-এর শিরোপা দিয়ে। তা থেকে বাদ পড়েননি নোবেল পুরস্কার জয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগমানও।
‘সম্মানিত’দের তালিকায় ট্রাম্প নোবেলজয়ীকেই রেখেছেন শীর্ষে! মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ নিয়মিত মতামত কলাম লেখার জন্য।
বুধবার ‘ফেক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর খুব পছন্দের টুইটারের মাধ্যমেই।
সেই ‘শিরোপা প্রাপক’ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে রয়েছে টেলিভিশন চ্যানেল ‘সিএনএন’, সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকেই ওই মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে চলেছেন ট্রাম্প। ওই তিনটি ছাড়া আমেরিকার আরও সাতটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া হয়েছে ওই শিরোপা।
কারা কারা সেই শিরোপা পেয়েছেন, তার তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির ওয়েবসাইটেও। তার লিঙ্কটাও ট্রাম্প তাঁর টুইটে দিয়েছেন। তালিকা প্রকাশের কিছু ক্ষণের মধ্যেই রিপাবলিকান পার্টির সেই সাইট ক্র্যাশ করে যায়।
ট্রাম্পের প্রশাসন জানাচ্ছে, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয়ের খবর যে ভাবে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলিতে করা হয়েছিল’, তার ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছে এই ‘ফেক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’।
ভোটে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পরের দিন ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ লেখা নিয়মিত কলামে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগমান লিখেছিলেন, ‘‘অর্থনৈতিক নীতির ব্যাপারে ট্রাম্পের অনভিজ্ঞতা আর তাঁর অপরিণামদর্শিতা দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতির পক্ষে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ দিনের তালিকায় প্রথম সারির মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘এবিসি নিউজ’-এর প্রবীণ সাংবাদিক ব্রায়ান রসের করা একটি ‘ভুয়ো খবর’-এরও উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু সেই খবরটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তদানীন্তন উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে। আর তা ছিল যথেষ্টই বিস্ফোরক! তা একেবারেই ভাল লাগেনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিক রসকে সেই ‘ভুয়ো খবর’টি ‘শুধরে’ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। যেন তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘চাকরি’ করছেন! শুধু তাই নয়, রসকে তাঁর অফিসের কাজ থেকে চার সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তাঁর বেতনও কেটে নেওয়া হয়েছিল।
সে না হয় হল! এ বার ভাল সাংবাদিকতা আর খারাপ সাংবাদিকতারও বাছবিচার করতে শুরু করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
শিরোপা প্রাপকদের তালিকা দিয়ে প্রথমে একটি টুইটের পরে তাই আরও একটি টুইট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই টুইটে ট্রাম্প ‘ভাল আর সৎ সাংবাদিকতা’র পক্ষে সওয়াল করে লিখেছেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসৎ সাংবাদিকতার কয়েকটি নমুনা সত্ত্বেও অনেক মহান সাংবাদিক রয়েছেন, যাঁদের আমি শ্রদ্ধা করি। তাঁরা যে সব ভাল খবর দেন, তা নিয়ে গোটা আমেরিকা গর্ব করতে পারে।’’
বুধবারই রিপাবলিকান পার্টির এক সেনেটর জেফ ফ্লেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। ফ্লেক বলেছিলেন, ‘‘সত্যের প্রতি একটুও শ্রদ্ধা নেই ট্রাম্পের। তাই সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে যে ভাবে লড়তে নেমেছেন তিনি, তাতে তিনি গণশত্রু হয়ে উঠেছেন।’’
তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘সেরা ভুয়ো খবর’-এর শিরোপা প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রমাণ করলেন তিনি গণশত্রুই বটে!