অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাক্সভিল শহরটা হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়েছে। ছোট্ট ছিমছাম শহরটায় কেমন এক বিষাদ জেঁকে বসেছে আজ। আপন শহরটায় এমনভাবে ফিরবেন ফিলিপ হিউজ, কে ভেবেছিল? বাবা গ্রেগরি ও ভাই জেসন হিউজের কাঁধে কফিন। জেসনের পেছনে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। এ কফিনের ভার কত, তাঁদের চেয়ে ভালো বুঝবে কে?
খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছেন মা ভার্জিনিয়া হিউজ। ছেলের এ চলে যাওয়া সইবেন কী করে? কোনো মা কি এ ব্যথা সইতে পারেন? হিউজের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আসা প্রায় সব অতিথিই অশ্রুসিক্ত, বেদনাক্রান্ত।
হিউজকে বিদায় জানাতে ম্যাক্সভিল হাইস্কুল মিলনায়তনে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের সবাই। যার বাউন্সারে দুর্ঘটনা, শন অ্যাবটের মনের মেঘগুলো নিশ্চয় বৃষ্টি হয়ে ঝরেছে আজ। ভীষণ আবেগাক্রান্ত দেখা গেল তাঁকে। অনুষ্ঠানে ছিলেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়াহ, ব্রায়ান লারা, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের মতো সাবেক তারকারা। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের বিরাট কোহলি, রবি শাস্ত্রীও।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) অনুষ্ঠিত শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ খেলতে গিয়ে ঘটল সেই দুর্ঘটনা। ক্লার্ক তাঁর বক্তব্যে এসসিজিকে ‘পবিত্র মাঠ’ বলে অভিহিত করলেন। সজল চোখে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক বললেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমি এসসিজির মাঠের মধ্যখানে হেঁটেছি। পায়ের তলায় সেই একই ঘাসের ফলা—যেখানে সে ও আমি ছিলাম, এখানে উপস্থিত তার অনেক সতীর্থ মিলে জুটি গড়েছিলাম। খেলার দিনগুলোয় মাথায় আঁকা স্বপ্নগুলোর সঙ্গে করতাম বসবাস।… তার আত্মা ছুঁয়েছে এ মাটি। এ কারণে এ মাঠ আমার জন্য সারা জীবন পবিত্র থাকবে। সেখানে তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারব। কীভাবে বিশ্বের বহু মানুষকে সে নাড়া দিয়েছে, সেটিও দেখতে পাব। তার প্রতি ক্রিকেটপ্রেমীদের শ্রদ্ধা আমাকে এগিয়ে নেবে।…তার উদ্দীপনা আমাদের কাছাকাছি এনেছে…সব সময় চেয়েছে সবাইকে এক করতে। চেয়েছে খেলা ও খেলাপ্রেমী মানুষের জন্য নিজের ভালোবাসা উদযাপন করতে।’
