বেঁচে থাকলে আজ বড় খুশি হতেন জো কক্স। কারণ সারাটা জীবন একাকিত্বই কুরে-কুরে খেয়েছে তাঁকে। জো কক্স ফাউন্ডেশন টুইটারে জানিয়েছে তাদের এই প্রতিক্রিয়া।
২০১৬-তে ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটের ঠিক আগে খুন হয়েছিলেন লেবার পার্টির এই সাংসদ। সে খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটেনকে। খারাপ খবরের সাময়িক ধাক্কা ধীরে ধীরে সয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু জো-এর মৃত্যুর পরে সামনে আসে তাঁর জীবনের অপার নিঃসঙ্গতার কথা। তা কোথাও একটা দাগ কেটে যায় ব্রিটিশ ভাবনায়। রাজনীতিক থেকে সমাজকর্মী, সকলেই বুঝতে শুরু করেন, একাকিত্ব আর ব্যক্তিগত বিষয় নয়, সমাজের গভীর অসুখ। আধুনিক জীবনের বিষণ্ণ বাস্তবতা।
এ ব্যাপারে কিছু একটা করা যে দরকার, সেটা অনুভব করেন অনেকেই। দেশে-দেশে এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা-আলোচনা-লেখালেখি কম হচ্ছে না। কিন্তু হাতে-কলমে কিছু করার চ্যালেঞ্জটা প্রথম নিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। মানুষের একাকিত্ব সামলাতে নতুন একটা মন্ত্রকই গড়ে ফেলেছেন তিনি। দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রেসি ক্রাউচকে। অল্পবয়সি এই মহিলা বর্তমানে ব্রিটেনের ক্রীড়া ও নাগরিক সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী।
সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা লড়াই। কী ভাবে এগোবেন ট্রেসি? এখনই সেটা বলা যচ্ছে না। এই মুহূর্তে একটা দিশা শুধু রয়েছে সামনে। যার ভিত্তিতে এ বছরের মধ্যেই সবিস্তার কর্মসূচি প্রকাশ করবে সরকার। তাতেই বলা হবে, নিঃসঙ্গদের পাশে দাঁড়াতে ঠিক কী কী করা হবে। এ ব্যাপারে মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির।
সকলেই মানছেন কাজটা সহজ নয়। ব্রিটিশ রেড ক্রসের হিসেব বলছে, ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ দেশবাসীর মধ্যে ৯০ লক্ষেরও বেশি মানুষ সব সময়ে কিংবা জীবনের কোনও না কোনও পর্বে একাকিত্বের যন্ত্রণা সয়েছেন বা সইছেন। সমাজসেবীদের অনেকই মনে করেন, নিঃসঙ্গতা ক্রমে ক্রমে ‘গোপন মহামারি’র আকার নিয়েছে সমাজে। জো-র স্মরণে এক অনুষ্ঠানে টেরেসা আজ বলেন, ‘‘বহু মানুষের কাছে একাকিত্ব আধুনিক জীবনের এক দুঃখজনক বাস্তবতা। এঁদের কেউ বয়স্ক, কেউ অন্যের সেবা করে করে চলেছেন, কেউ বা হারিয়েছেন ভালবাসার মানুষটিকে। ভাবনাগুলি ভাগ করে নেওয়ার কেউ নেই। নেই দু’টো কথা শোনার লোক। সমাজের স্বার্থে এবং আমাদের নিজেদের জন্যই একাকিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জটা আমি নিলাম।’’
জো শুধু নয়, এই ঘোষণায় হয়তো বা খুশি হতেন ‘একশো বছরের নিঃসঙ্গতা’র লিপিকার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজও। তাঁর সেই কর্নেলের মতো মানুষেরা— কেউ যাঁদের চিঠি লেখে না, বলে না ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’, তাঁদের পাশে থাকার ব্রত নিল ব্রিটেন। শুরুটা অন্তত করে দিলেন টেরেসা।