ষ্টাফ করেসপনডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
ঢাকা: ঢাকার গুলশানে ৫ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
কুষ্টিয়ার-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন দরে গুলশান লেক ঘেঁষা ওই জমিটি বরাদ্দ পেয়েছেন,যার প্রকৃত মূল্য কয়েক গুণ বেশি।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হানিফকে গুলশান আবাসিক এলাকার ৩২/এ নং সড়কের পাঁচ কাঠা আয়তনের ৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেয়।
ভূমি বরাদ্দ বিধি ১৩/এ ধারায় প্রতি কাঠা ৫০ লাখ টাকা মূল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী হানিফকে এই জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে এই সংক্রান্ত চিঠিতে দেখা যায়।
রাজউকের ওই চিঠির একটি অনুলিপি পাওয়া গেছে।
রাজউকের এস্টেট-১ শাখা থেকে প্লটের বরাদ্দপত্রে হানিফের পরিচয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১৮ মে জমি পেতে আবেদন করেন হানিফ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বরের স্মারক এবং ‘কর্তৃপক্ষের’ ১১/২০১৩তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হানিফকে ওই প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়।
জামানত বাবদ দেয়া ৫ লাখ টাকা বাদে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এককালীন পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল।
অথবা ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর- এই তিন কিস্তিতে টাকা শোধ করতে বলা হয়েছিল হানিফকে।
রাজউক চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন বলেন, “সরকারি জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটা প্রিভিলেজ কোটা আছে, সেই কোটায় বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকতে পারে।”
ভূমি বরাদ্দ বিধি ১৩/এ ধারায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, মন্ত্রী, সাংসদ এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই সুবিধা সরকার দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সময় হানিফ সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী ছিলেন না- এ তথ্য জানানোর পরে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, “ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারব না।”
রোববার রাজউক চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে আবারো রাউজক গেলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয় তিনি মন্ত্রণালয়ে মিটিংয়ে আছেন।
রাজউকের লুকোচুরি
হানিফের জমি বরাদ্দের বিষয়ে জানতে গত ২২ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর রাজউকের এস্টেট-১ শাখার উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের কাছে গেলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারব না।”
পরের দিন এস্টেট শাখার পরিচালক মোহাম্মদ মুসার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই তথ্য পাবেন।” ইন্টারকমে ওয়াদুদকে তথ্য দিতেও বলেন তিনি।
এরপর ওয়াদুদের কাছে গেলে তিনি বলেন, “যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের পছন্দের লোককে প্লট বরাদ্দ দিতে পারে।
“গুলশান ৩২/এ নং সড়কের প্লট রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বুঝতেই পারছেন গোপন বিষয়। এ বিষয়ে এর থেকে বেশি কিছু বলা যাবে না।” বিস্তারিত তথ্য পেতে লিখিত আবেদন করার পরমর্শ দেন ওয়াদুদ।
গত ৩০ এপ্রিল তথ্য অধিকার আইনে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ও জোন-৫ এর পরিচালক মো. শাহ আলমের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়।
তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী, তথ্য দিতে ‘অপারগ’ হলে অপারগতার কারণ উল্লেখ করে আবেদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই তা আবেদনকারীকে জানাতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে তথ্য কর্মকর্তা আবেদন পাওয়ার পর বারবারই বলেছেন, “তথ্য দেয়া হবে, একটু সময় লাগছে।”
পরে শাহ আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “তথ্য এখনো হাতে পাইনি, পাচ্ছি না। স্যারদের সঙ্গে কথা বলছি, পরে খোঁজ নেবেন।”
রোববার আবারো শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখনো তথ্য পাননি তিনি।
তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৮ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, আবেদন করার পর থেকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবারহ করতে হবে।
৩০ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ১০ দিন শুক্র-শনিবার বাদে আরো দুই দিন সরকারি ছুটি ছিল। এই হিসাবে ১ জুন ২১ কার্যদিবস পার হলেও তথ্য দেয়নি রাউজক।
আইন অনুযায়ী, যে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সঙ্গে একাধিক তথ্য প্রদান ইউনিট বা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবারহ করা যাবে।
এক্ষেত্রে যে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা রাজউকেই রয়েছে। তাই ২০ কার্যদিবসের মধ্যেই তথ্য দেয়ার কথা ছিল।
এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, “তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলে আপনাকে তথ্য দিতে বাধ্য, বিষয়টি আমি দেখব।”