ঢাকা: আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ি প্রার্থীতা ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামীকাল। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা যাবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রধান দুই প্রতিদ্ব›দ্বী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের দলীয় ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তাদের পুরনো প্রার্থীকে ফের মনোনয়ন দিয়েছে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এবারই প্রথম ঢাকা সিটিতে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে এসিড টেস্ট হিসেবে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের বছরে জনপ্রিয়তার ‘পারদ’ পরিমাপে রাজধানীর এই নির্বাচনে জয় পরাজয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দলের নেতারা। এজন্য দুই দলই এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই বেছে নিয়েছেন। আর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশে-বিদেশে নিজ দলের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় দু’পক্ষই। তাই প্রার্থী মনোনয়নে বেশ কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে তারা। দলীয় মনোনয়নে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাদীক্ষাসহ সবকিছুই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আগ্রহীদের নির্বাচনী পরিকল্পনা শুনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সবার মতামত নিয়ে। ধানের শীষের প্রতীকে আগ্রহী ৫ জনের সাক্ষাতকার গ্রহণের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়ালকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত মনোনয়ন বোর্ড। একইভাবে ১৬ জন আগ্রহীর মধ্য থেকে আতিকুল ইসলামকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। এর মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতিদ্ব›িদ্বতা নিশ্চিত হয়ে গেল।
এদিকে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজধানীর উত্তর সিটিতে ভোটের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ছুটতে শুরু করেছেন। তবে নির্বাচনী উত্তাপের সাথে সাথে সংশয়ও দেখা দিয়েছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। বিশেষ করে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন ও স¤প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচনের তফসিল চ্যালেঞ্জ করে এবং তফসিলের কার্যকরিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেছেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। আজ এই দুটি রিট আবেদনের আদেশ হবে।
তবে এই সংশয়ের সাথে সাথে নিজেদের দলের প্রার্থীদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রার্থীতা ঘোষণার পর নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে এবং বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীসহ রাজধানীর ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা।
অন্যদিকে তাবিথ আউয়ালকে বেস্ট ক্যান্ডিডেট, সবচেয়ে ভালো ক্যান্ডিডেট, ফিটেস্ট ক্যান্ডিডেট বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গতবার সে নির্বাচন করেছে, প্রচুর ভোট পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, সে হচ্ছে ইয়াং, সে বাইরে বহুদিন ছিল, পড়াশোনা করেছে, অভিজ্ঞতাও হয়েছে। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
এবার ঢাকা উত্তরের এই উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন ১৬ জন। তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন। এরা হলেন- বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি এইচবিএম ইকবাল, কবি রাসেল আশিকী, ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক, মণিপুর স্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল ফরহাদ হোসেন, শিক্ষক শাহ আলম, এফবিসিসিআই পরিচালক হেলাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবায়ের আলম, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শামীম হাসান, ব্যবসায়ী আবেদ মনসুর, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইয়াদ আলী ফকির, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র ওসমান গণি, জামান ভূঞা ও আসমা জেরিন ঝুমু। এসব প্রার্থীদের মধ্য থেকে নৌকা প্রতীকের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী বেছে নিতে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে অনেক জনের নাম আলোচনায় থাকলেও গত রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৫ জন মনোনয়ন ফরম তুলেন এবং সোমবার তা জমা দেন। একই দিন রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়াপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সামনে সাক্ষাতকার দেন ওই ৫ প্রার্থী। এরা হলেন- গতবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচন করা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ, সাবেক এমপি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সাক্ষাতকার গ্রহণের পর রাতে তাবিথ আউয়ালকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়ালের নাম ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে পাঁচজন প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে ভোটে জয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী হিসেবে তাবিথকেই দেখছেন তারা। আমরা মনে করেছি, হি ইজ দ্য বেস্ট ক্যান্ডিডেট, সবচেয়ে ভালো ক্যান্ডিডেট, ফিটেস্ট ক্যান্ডিডেট। অন্যরাও যোগ্য ছিলো। তার মধ্যে তাবিথকে মনে হয়েছে, এই নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ক্যান্ডিডেট। ফখরুল বলেন, সে গতবার নির্বাচন করেছে, প্রচুর ভোট পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, সে হচ্ছে ইয়াং, সে বাইরে বহুদিন ছিল, পড়াশোনা করেছে, অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারলে তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অবাধ, সুষ্ঠু, ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করলে তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অত্যন্ত সহৃদয়, সদালাপী, ন¤্র ও অন্যের প্রতি আন্তরিক তাবিথ আউয়াল জনগণের সাথে মিশে যেভাবে কৃতিত্বের সাথে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন তাতে তিনি আধুনিক ঢাকা গড়তে সক্ষম হবেন বলেই জনগণ বিশ্বাস করে। বিগত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তিনি বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন। সেসময় তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে তিনি নারী-পুরুষসহ সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার প্রচারণায় মুগ্ধ হয়েছিলেন ঢাকাবাসী। কিন্তু যদি বিগত নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতো, যদি ভোট ডাকাতি না হতো তাহলে তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেন।
এবারও দল থেকে আমরা তাবিথ আউয়ালকে মনোনয়ন দিয়েছি। এখন নির্বাচন কমিশনে প্রার্থী হিসেবে ফাইল করা, জমা দেওয়া, বাছাই ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হলে তিনিই (তাবিথ আউয়াল) ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হবেন। এজন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে তাবিথ আউয়ালে পক্ষে ২০ দলীয় জোটসহ সাধারণ জনগণকে তার পাশে দাঁড়াতে ও ভোট দিতে আহবান জানান রিজভী।