মো: আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত-মাগফিরাত-নাজাত প্রার্থনা করে দেশী বিদেশী মুসল্লি সহ সারা বিশ্ব জাতির সকল মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৮ সালের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের তিন দিন ব্যাপী ইজতেমা শেষ হয়েছে।
আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আখেরী মোনাজাত শুরু হয় এবং বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শেষ হয়। প্রথম বারের মতো বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত বাংলায় করা হয়েছে। ৩৫ মিনিট স্থায়ী আখেরী মোনাজাতের প্রথম ১৪ মিনিট আরবিতে ও পরের বাকী ২১ মিনিট বাংলায় পরিচালিত হয়। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ঈমাম তাবলিগ জামাতের শুরার সদস্য হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। আখেরী মোনাজাতে লাখো লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধবনিতে টঙ্গীর তুরাগ পাড় ও চারপাশের এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে বাংলাদেশ সহ ১৬টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এবং বিদেশী মুসল্লি সহ ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ অংশ গ্রহন করে বলে ধারনা করছে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব মুসলমান জাতির সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতিত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের তিন দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্তি হয়েছে।
আখেরী মোনাজাতে অংশ নেয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জাহিদ হাসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি,টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রজব আলী সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা শরীক হন। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমা মাঠে আখেরী মোনাজাতে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সরকারে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের কর্তকর্তারা অংশ গ্রহন করেন।
এদিকে, আজ রোববার আখেরী মোনাজাতের আগে সকাল সোয়া ৮টা থেকে বাংলা ভাষায় হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। ঢাকার কাকারাইলের বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা আবদুল মতিন বাংলায় টঙ্গী তুরাগ পাড়ের প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া দেশী বিদেশী প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষাধিক মুসল্লির জন্য এ হেদায়েতি বয়ান করেন। আজ রোববার আখেরী মোনাজাতে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা। মোনাজাত শুরুর আগে পুরো ইজতেমা মাঠ কান্নায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মুনাজাতে মানুষের স্রোত নেমেছে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের উভয় তীরে। বিশ্ব ইজতেমার মাঠ ছাড়িয়ে চার দিকের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা জুড়ে, সড়ক ও মহাসড়কে, রাস্তার পাশে,বাসা বাড়ির ছাদে এবং দাঁড়িয়ে যে যেখানে স্থান পেয়েছে সেখানে আখেরী মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
কুরআন এবং হাদিসের পথে মতে থেকে জীবন পরিচালনার জন্য বার বার আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করেন। আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ ময়দানসহ আশ-পাশের কয়েকটি কিলোমিটার জায়গা। প্রচুর শীতকে উপক্ষো করে শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, দেশি-বিদেশি মুসল্লি সহ ১৬টি জেলার মুসল্লিরা মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করে। মোনাজাতের প্রথম ১৫ মিনিট কুরআনের আয়াত ও হাদিস পাঠ করেন মাওলানা যোবায়ের। ক্ষমা প্রার্থনা, রহমত প্রার্থনা ও ঐক্যের আয়াত-হাদিসগুলোই বেশি পাঠ করেন তিনি।
দোয়ায় দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা করে যখন সারা বিশ্বের মুসল্লিদের সুখকামনা করা হয়েছে। ইজতেমার ব্যবস্থাপনায় সরকারের সহযোগিতার জন্য কল্যাণ কামনা, সুশিক্ষা অর্জনের জন্য হেদায়েত কামনা করেন । মোনাজাতে দেশ ও বিশ্বে যে সমস্ত ভালো কাজ হচ্ছে তা কবুল করে নেওয়ার ফরিয়াদ জানান মাওলানা যোবায়ের । এসময় আখেরি মোনাজাতে সার্বিকভাবে ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সব বয়সের বিভিন্ন পেশার দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি আল্লাহর দরবারে দু’হাত তোলেন। কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা, আত্মশুদ্ধি, দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত, বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য, শান্তি, দেশ ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনায় দু’হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।
মোনাজাতে বিশ্ব মুসলমানের সঠিক পথে চলা, তাবলিগ কাজে সব মুসলিমকে নিয়োজিত হওয়া, ইহকাল-পরকালের শান্তি কামনা,সৃষ্টিকর্তাও নিকট আকুতি-মিনতি করা হয়। এসময় লাখ লাখ মুসল্লি দু’হাত তুলে অনেকে দু’নয়নের জল ফেলে মহান আল্লার নিকট ফরিয়াদ করেন।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন আজ জানান, আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে প্রথম ধাপের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপের তিন দিনব্যাপী ইজতেমা পূনরায় শুরু হবে। একইভাবে ২১ জানুয়ারি দুপুরে সকল মানুষের সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতিত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে ২০১৮ সালের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা আসরের সমাপ্তি হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ আজ জানান, প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও শান্তিপূর্ন ভাবে শেষ হয়েছে। আশা করি দ্বিতীয় পর্বের ও তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা আমরা ভাল ভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।
তিনি জানান, মুসল্লিদের নিরাপত্তায় জন্য এবার প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে ৬জন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো ইজতেমা ময়দানে ৮ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ ইজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। গত বারের চেয়ে এবার আরো ১৫শ পুলিশ বাড়ানো হয়েছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ আজ জানান, আখেরি মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূবাইলের মিরেরবাজার ও আশুলিয়ায়ার আবদুল্লাহপুরে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে,তারা বিকল্প পথে চলতে পারবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা যাত্রীদের কাছে দু:খিত।
আগামী বছর (২০১৯) সালের বিশ্ব ইজতেমা ১১ জানুয়ারি : আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ মুরুব্বিদের এক পরামর্শ সভায় ওই তারিখ নির্ধারণ করা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকের পরামর্শ অনুয়ায়ী আগামি বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে ২০১৯ সালের ১১জানুয়ারি।
বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন আজ জানান, শুক্রবার রাতে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত মতে আগামী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি