সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তর বাউরভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের শারীরিক নির্যাতন সইতে না পেরে স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন কোমল মতি শিক্ষার্থীরা। নির্যাতন সইতে না পেরে ইতোধ্যে সমাপনী পরীক্ষার্থীসহ ৫ম শ্রেণীর ৩ জন ছাত্রী পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় চলে গেছে। এ নিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে, তেমনিভাবে স্থানীয় অভিভাবকগণসহ সচেতন মহল বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত।
‘শিখবে শিশু হেসে খেলে, শাস্তিমুক্ত পরিবেশ পেলে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর গত বছরের ২৫ মে সারা দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। যার বিষয়বস্তু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সকল ধরনের শারীরিক-মানসিক শাস্তিপ্রদান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংত্রুান্ত তথ্য প্রেরণ।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ৩নং চারিকাটা ইউনিয়নের তুবাং গ্রামে অবস্থিত উত্তর বাউরভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজেন চন্দ্র দেব অত্যন্ত উগ্র মেজাজী হওয়ায় রীতিমত শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালান। শারীরিক নির্যাতনে অতিষ্ট বহু শিক্ষার্থীর পড়া-লেখা এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী পাশ্ববর্তী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে বলেও জানা গেছে। স্থানীয় অভিভাবকগণ বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রশাসনসহ শিক্ষা বিভাগকে অবগত না করায় প্রধান শিক্ষক বিজেন চন্দ্র দেব এযাবৎ শিশুদের শারীরিক প্রহারে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
গোপন একটি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মারাত্মকভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলার সারীঘাট ডুপি গ্রামের আব্দুস শুকুরের মেয়ে তাহমিনা বেগম। মেয়েটি তার নানা তুবাং লামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমদের বাড়ীতে থেকে পড়া-লেখা করত।
প্রধান শিক্ষক বিজেন চন্দ্র দেব কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে শিশু মেয়েটির সাথে যখন কথা হয় তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে অনুরূপ ঘটনা বলতে শুরু করল। আরো ২ জন মেয়ে, তারাও ঠিক একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে স্কুল ছেড়ে এখন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে।
এরা হচ্ছে- তুবাং লামাপাড়া গ্রামের আমীর আলীর মেয়ে ফাহিমা বেগম এবং স্থানীয় গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ীতে থেকে পড়ুয়া জব্বার আলীর মেয়ে হেনা বেগম।
নির্যাতনের কারন জানতে চাইলে তারা বলে, আমরা তেমন কোনো অপরাধ করিনি। স্কুলে খেলাধুলা করতে গিয়ে একটু দুষ্টমী করলে, বাড়ীর পড়া উপস্থাপন করতে না পারলে অথবা সময় মত উপস্থিত না হলে সর্বোচ্ছ শাস্তি পেতে হয়। এর মধ্যে টেবিলের নিচে মাথা আটকে রাখা হয়, তার সাথে রয়েছে বেত্রাঘাত। এছাড়া কান ধরে উটা-বসা, চড়-থাপ্পর এগুলো হর-হামেশা আমাদের উপর চলে।
তাদের কথা বার্তা আর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বুঝা গেছে, স্কুল চলাকালীন সময়ে রীতিমত তাদের মাঝে একটা আতঙ্ক বিরাজ করে। অর্থাৎ যে কোনো সময় তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক যে কাউকে শারীরিক প্রহার করা শুরু করেন।
তাছাড়া সহকারী শিক্ষক যারা রয়েছেন, তাদের অবস্থাও প্রায় একই রকম। তবে প্রধান শিক্ষকের শাসনের মাত্রাটা একটু বেশী। কারন তিনি তো স্কুলের ‘হেড স্যার’ তাই একটু বেশি আঘাত করার ক্ষমতা মনে হয় সরকার তাকে দিয়েছেন এমনিভাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিল শিশু শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে উত্তর বাউরভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজেন চন্দ্র দেব’র সাথে আলাপকালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মডেল টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে ৩ মাস আগে। আর যদি আমার দ্বারা কোনো ছাত্রী শাসনের শিকার হয়েই থাকে তবে এত দিনপর অভিযোগ তুলা হচ্ছে কেন? এটা নিতান্তই ষড়যন্ত্র বলে তিনি দাবীী করেন।
অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিল’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এব্যাপারে আমি এখনো অবগত নই, তবে অভিযোগ আসলে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানিত হলে বিহীত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।