ভারতের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাঁদের অভিযোগ, বিচারব্যবস্থা যেভাবে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ছে তাতে দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে।
শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতি। শীর্ষ আদালতের মামলা বণ্টনসহ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। সংবাদ সম্মেলন করা ওই চার বিচারপতি হলেন চেলামেশ্বর, রঞ্জন গগৈ, মদন লোকুর ও কুরিয়েন জোসেফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই মাস আগে মামলা বণ্টনের অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে ওই চার বিচারপতি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের বাদ দিয়ে নতুন বিচারপতিদের এজলাসে পাঠানো হয়। সম্প্রতি সোহরাবুদ্দিন ‘এনকাউন্টার মামলার’ বিশেষ বিচারক বি এইচ লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের অগ্রাহ্য করে নতুনদের কাছে এই মামলা বিচারের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন ওই চার বিচারপতি।
সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতিরা বলেছেন, ‘বিচারব্যবস্থা যেভাবে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ছে তাতে দেশের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে।’ তাঁরা বলেন, সম্প্রতি মেডিকেল কলেজে ভর্তি-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার শুনানি নিয়ে বিচারপতি চেলামেশ্বরের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই মামলায় বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে
এসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই চার বিচারপতির একজন বলেন, ‘তাঁর (প্রধান বিচারপতি) ইমপিচমেন্টের বিষয়ে এখন রাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি চেলামেশ্বর বলেন, এসব বিষয় জানিয়ে আগে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব আসেনি। আজ সকালে তাঁরা আবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগ তোলার কোনো নজির নেই।
এ বিষয়ে বিচারপতি চেলামেশ্বর বলেন, ‘এটা আসলেই নজিরবিহীন ঘটনা। তবে এটা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।’
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে কী ঘটছে তা জাতিকে জানাতেই এখানে আসা।’
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।