২২ বছর আগে ট্রেন দুর্ঘটনার পর কেটে বাদ দিতে হয়েছিল ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ। অথচ তার পরের ২২ বছরে ভারতের কামারহাটির বাসিন্দা আফজাল খানের ঝুলিতে আটটি ‘ম্যারাথনে’ অংশগ্রহণের বিরল কৃতিত্ব। পাড়ার ক্রিকেট ও ফুটবল দলেরও তিনি নিয়মিত খেলোয়াড়।
আফজালের এক পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে ‘ব্লেড’ লাগানো। দুর্ঘটনার সময় বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনে আত্মীয়দের লাগেজ তুলে দিয়ে প্লাটফর্মে নামার আগেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল ১৯৯৬ সালের ৯ জানুয়ারি।
তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেন লাইনে পড়েছিলেন সেদিন। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেদিন এক পা হারাতে হয়েছিল তাকে। অবশ্য পা হারিয়ে দমে না গিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
তিনি বলেন, অনেক দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। আটবার অংশ নিয়েছি ম্যারাথনে।
তিনি আরো বলেন, ক্রিকেটে আমি ব্যাটসম্যান। দৌড়ানোর সময় রানার লাগে না। ফুটবলে এখন আর স্ট্রাইকার পজিশনে খেলতে পারি না। পাড়ার টিমের গোলকিপার হিসেবে থাকি।
দুর্ঘটনার স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ট্রেন চলে যাওয়ার পর খানিকটা সময় লেগেছিল এটা বুঝতে যে, আমি বেঁচে আছি। হাসপাতালে যারা আমাকে দেখতে আসতেন তারা বলতেন, ছেলেটার ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে গেল।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমাকে প্রতিবন্ধী বলেন। আমি তাদের হেসে বলি, আমার জীবনে ‘ডিস’ বলে কিছু নেই। সবকিছুতেই আমি ‘এবল’!
একনাগাড়ে বলতে থাকেন, আমার মা, পরিবার, স্ত্রী এবং বামপন্থী মতাদর্শ আমাকে লড়তে শিখিয়েছে। বাসে-ট্রামে উঠলে আমি প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের দিকে তাকাই না।
প্রথম দিকে হুগলির একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি নকল পা ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতামূলক খেলার জন্য উন্নত মানের নকল পা ব্যবহার করেন। ২০১১ সালে শিক্ষকতা পেশায় আসেন আফজাল। প্রথমে কলকাতার একটি স্কুলে। এখন বদলি হয়ে কামারহাটিতে আছেন।