ঢাকা: গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। একজন বাদে পুরনো প্রার্থীরাই এ নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু বরিশাল সিটিতে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, রাজশাহীর মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং খুলনার মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি আগামীতেও দলের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন। আর বরিশালের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের পরিবর্তে সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি দলে আলোচনা আছে। এ প্রসঙ্গে সরোয়ার বলেন, দলের নীতিনির্ধারকরা যদি আমাকে প্রার্থী করতে চান, সেক্ষেত্রেই কেবল বিবেচনা করা হবে। আর কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করলে সেখানে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের কথাও ভাবা হচ্ছে। বরিশালে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বতর্মান মেয়র আহসান হাবিব কামালের জনপ্রিয়তা খুবই কম বলে কেন্দ্রে অভিযোগ আছে। তবে তিনি আগামীতেও দলের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। পাঁচ সিটিতে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরা মনোনয়ন বাছাইয়ে তালিকার উপরের দিকেই থাকবেন। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এখনো কিছুদিন বাকি আছে। যথাসময়ে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
২০১৩ সালের ১৫ জুন একযোগে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। একই বছরের ৬ জুলাই হয় গাজীপুর সিটির নির্বাচন। ওই নির্বাচনে সব সিটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তাই এই পাঁচ সিটি নিয়ে আগামীতেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক আশাবাদী।
জানা যায়, পাঁচ সিটি নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় বিএনপি। সেজন্য ভোটের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্বাচনে থাকবে দলটি। ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র থেকে বের না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বার্তা পাঠানো হয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, সিটির জয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা যাবে, সুষ্ঠু ভোট হলে সব নির্বাচনেই বিএনপি বিজয়ী হবে। তবে ভোট ডাকাতির শঙ্কাও রয়েছে দলটির। যদি ভোট কেন্দ্র দখল করে কিংবা ভিন্ন কৌশলে কারচুপি করে জনগণের ফলাফল ছিনতাই করে আওয়ামী লীগ—তাও জনগণের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। জয়-পরাজয় দুটোতেই লাভ দেখছে দলটি।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ও দুবারের নির্বাচিত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এবারও আরিফুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই কামরানই থাকার সম্ভাবনা বেশি। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে ইতিমধ্যে আরিফ তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া নির্বাচিত হওয়ার পর দুই বছর কারাভোগ নগরবাসীর কাছে তার সহানুভূতির জায়গা করে নিয়েছে। বড় ধরনের কোনো চমক না থাকলে তিনি আগামী নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করেন নগরবাসী। তবে দলীয় কর্মকাণ্ডে আরিফের সম্পৃক্ততা কম অভিযোগ এনে প্রার্থী পরিবর্তন চাইছে দলের একাংশের নেতা-কর্মী। পরিবর্তনের এই সুর কাজে লাগাতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন বদরুজ্জামান সেলিম।
বরিশালে হেভিওয়েট ছাড়াও বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তারা হলেন, সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, সহসভাপতি ১ নম্বর প্যানেল মেয়র হাজী কেএম শহীদুল্লাহ, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন এবং মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন মেয়র পদে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিই একমাত্র দল যে দেশে সবচেয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ এখন আর সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। তারা গায়ের জোরেই ক্ষমতায় থাকতে চায়। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই আমরা অংশ নিয়েছি। শঙ্কা জেনেও সামনের সিটি নির্বাচনে অংশ নেব। নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।’