শৈত্যপ্রবাহটির বয়স আজ এক সপ্তাহ পূর্ণ হতে চলেছে। গত সোমবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডও হয়েছে, তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বেশির ভাগ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনো ১০ ডিগ্রির নিচে। এতে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্টে রয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৩৪ জনের। এদের বেশির ভাগই শিশু।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, শৈত্যপ্রবাহটি আরও দু-এক দিন চলতে পারে। তবে দেশের বেশির ভাগ এলাকাতেই তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে পারে। আগামী শুক্রবার থেকে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিক অর্থাৎ সহনীয় মাত্রায় শীত থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, আজও দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে পারে। চলমান শৈত্যপ্রবাহটি আরও এক থেকে দুই দিন চলতে পারে।
৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া তীব্র শীতে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে বেশির ভাগই দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১৭ জন, কুড়িগ্রামে ১৪ জন ও হবিগঞ্জে ৩ জন। এদের বেশির ভাগই শিশু। তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার তা বেড়ে ৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় তাপমাত্রা কমবেশি ২ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়েছে। তারপরও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা ছাড়া দেশের সর্বত্র মৃদু থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
তেঁতুলিয়া থেকে ফিরে প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শীতল বাতাস ও কনকনে ঠান্ডায় কাতর হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াবাসী। গেল কয়েক দিন শীতের প্রকোপে কাজে যেতে পারছিলেন না দিনমজুরেরা।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেঁতুলিয়ায় এর আগের বছরগুলোতে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শীতের দাপট শুরু হতো। এ বছর জানুয়ারির শুরুতে শীতের দাপট শুরু হয়েছে। কয়েক দিন ধরে তীব্র ঠান্ডা। দুপুরের পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তা দ্রুত মিলিয়ে যায়। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। সন্ধ্যার আগেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা এলাকা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়তে থাকে। টপটপ করে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান বলেন, ‘দরিদ্র শীতার্ত মানুষেরা শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। এ বছর সরকারিভাবে ২৭০টি কম্বল পেয়েছি, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’
গতকাল পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দেবনগরে মাটি খুঁড়ে পাথর তোলার কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ত দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সূর্যের তাপে শরীর গরম করছিলেন। সে সময় কথা হয় খোলটাপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামের (৫৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাইল (সোমবার) ঠান্ডারতানে ঘর থ্যাকে বাইর হবা পারুনি। আজই রোদ উঠিয়ে বলে কামত আইচু। এলা কাজের ফাঁকে রোদ তাপাছু।’