এমনিতেই আদালতের কার্যক্রম শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। তার ওপর আসামিপক্ষের কয়েকজন অনুপস্থিত ও কয়েকজন অপ্রস্তুত আইনজীবীর কারণে আদালতের কার্যক্রম ৪০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ জজ আদালতের এই ছিল গতকাল মঙ্গলবারের চিত্র। এই আদালতে ওই মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।
গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী রেজাউর রহমানের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পলাতক আসামি জাহাঙ্গীর আলম মদনের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. সৈয়দুল হক, পলাতক আসামি রাতুল আহমেদ বাবুর পক্ষে আইনজীবী মো. মশিউর রহমান এবং পলাতক আসামি মহিবুর মোক্তাকিনের পক্ষে আইনজীবী হালিমা আক্তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের মক্কেলের বেকসুর খালাস দাবি করে বলেন, মামলার এজাহারে এই আসামিদের নাম নেই। ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কেউ তাঁদের নাম বলেননি। ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মুফতি হান্নানসহ চারজন তাঁদের নাম বলেছেন। তার ভিত্তিতে সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আকন্দ তাঁদের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত করেছেন। কিন্তু মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারেনি।
এই তিনজনের উপস্থাপনার পর আর কোনো আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে দাঁড়াচ্ছিলেন না। তখন বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে অন্য কোনো পলাতক আসামির পক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থিত নেই। এ সময় তিনি উপস্থিত আসামিদের পক্ষের কোনো আইনজীবীকে উপস্থাপন শুরু করতে বলেন। কিন্তু কেউই উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন না।
এ পর্যায়ে বিচারক আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আগেই আপনাদের ধারণা দিয়েছিলাম যে এ রকম পরিস্থিতি হতে পারে। কখনো কখনো কারও সমস্যা হতেই পারে। তাই আপনাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলাম। পলাতক আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না হলে উপস্থিত আসামিদের পক্ষে উপস্থাপন শুরু করা যাবে না এমন তো কোনো কথা নেই।’
এই পর্যায়ে আইনজীবী রেজাউর রহমান আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘উপস্থিত আসামিদের পক্ষের একাধিক আইনজীবী আদালতে আছেন। তাঁদের প্রস্তুতিও আছে। তাঁরা শুরু করলে আমরা সবাই সময়ের অপচয় থেকে মুক্তি পেতে পারি।’
এ সময় বিচারক উপস্থিত আসামিদের অন্যতম আইনজীবী সাইফুর রহমানকে উপস্থাপনা শুরু করতে বলেন। কিন্তু প্রস্তুত নন বলে উল্লেখ করে সাইফুর রহমান বলেন, পলাতক আসামিদের পক্ষে উপস্থাপনা শেষ হলে তিনি উপস্থাপনা শুরু করবেন তেমন প্রস্তুতিই নিয়েছেন। এরপর উপস্থিত আসামিদের আরও একজন আইনজীবীকে উপস্থাপনা শুরু করার জন্য বলা হয়। তিনি বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে আজ (গতকাল) আদালতে এসেছেন। তিনিও প্রস্তুত নন।
বিচারক তখন বলেন, এখন ছোটবেলার স্কুলের কথা মনে পড়ছে। আগের দিন শিক্ষক কোনো একটা অধ্যায় পড়তে দিয়ে পরদিন যখন ক্লাসে পড়া ধরতে শুরু করতেন, তখন শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজেকে আড়াল করতে চাইত। আজ আদালতেও সেই অবস্থা হয়েছে। কাকে জোর করব। সবার তো একই কথা—রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরা শেষ করলে বলব। উপস্থিত সাংবাদিকেরাও বিষয়টি উপভোগ করছেন।
এ সময় রেজাউর রহমান বলেন, ‘মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করার ব্যাপারে তাঁরা ঐকমত্য করেছেন কি না, মিটিং করে বা মিটিং ছাড়া।’
কিন্তু বিচারক বলেন, ‘এত দিন ওনারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। এখনো করবেন।’ এ সময় পূর্বোক্ত আইনজীবী সাইফুর রহমান বলেন, আগামীকাল (আজ বুধবার) পলাতক আসামিদের আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকলে তিনি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করবেন।
বিচারক একে ‘সুন্দর প্রস্তাব’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এতেই প্রমাণ হয় যে আসামিপক্ষ সময়ক্ষেপণ করতে চায় না। বিচারকাজে সহযোগিতা করতে চায়। এই পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে বিচারক আদালতের কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন।