বাংলাদেশে রয়েছে চলমান শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাংলাদেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে উত্তরবঙ্গে। এর আঁচ পড়েছে দক্ষিণবঙ্গ ও মধ্যাঞ্চলে। জীবন বিপর্যস্ত, মানবতা বিপন্ন। একটু উষ্ণতার জন্য গবাদিপশুর খাদ্য জ্বালিয়ে দিতে মায়া করছেন না কৃষক। ছিন্নমূল মানুষ আবর্জনা জ্বালিয়ে তাতে হাত মেলে বাঁচার চেষ্টা করছেন। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ভেঙে দিয়েছে অতিথের শীতের সব রেকর্ড। স্মরণকালের সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গতকাল সোমবার পঞ্চগড়ে। তবে আগামী দুই দিনে পরিস্থিতির উন্নতির আভাস রয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। ভারত ভাগের পরের বছর, ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭০ বছর ধরে রোজকার তাপমাত্রার হিসাব রাখে অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। খোঁজ করা হলো অধিদপ্তরের ইতিহাসের পাতায়। নথিপত্র বলছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। তাপমাত্রার রেকর্ড সংরক্ষণের ৭০ বছরের ইতিহাসে গতকালই ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। খবর সমকাল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ১০টি তাপমাত্রার পাঁচটিই ছিল গতকাল। গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গতকাল ৮ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রির নিচে নামে। ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি। গতকাল একদিনেই তেঁতুলিয়া ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন পারদ নামে ২-এর ঘরে। সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি, যা ৭০ বছরের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল নীলফামারীর ডিমলায় ৩ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ৭০ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল রংপুর বিভাগের আট জেলার সবক’টিতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রির কম। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ছয়টি তাপমাত্রার পাঁচটিই রেকর্ড করা হয় গতকাল। ঢাকায় আবহাওয়া অফিস প্রতিষ্ঠার আগে অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার পঞ্চগড় মহকুমায় ১৯০১ সালে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। বাংলাদেশে সপ্তম থেকে দশম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২, ১৯৬৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীমঙ্গলে ৩ দশমিক ৩, ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৪ এবং ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরে ৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি। ঢাকার ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে তীব্র ও অন্যান্য অঞ্চলে মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তা দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তাপমাত্রা বাড়তে পারে। চলতি মাসে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে এর তীব্রতা কমে হতে পারে। তীব্র শীতের জন্য আবহাওয়াবিদরা উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়াকে দায়ী করেন। আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূঁইয়া শীতের কারণ হিসেবে জানান, বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বাকাশের ‘জেড প্রবাহ’ শক্তিশালী হয়েছে। এই সময়ে সূর্যের অবস্থান থাকে দক্ষিণ গোলার্ধের কাছাকাছি। তাই অস্ট্রেলিয়ায় চরম গরম পড়েছে। সেখানকার বাতাস লঘু হয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে উঠে গেছে। শূন্যস্থান পূরণ করতে উত্তরদিক থেকে ইউরোপের মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে প্রবাহিত হয়। একে ‘জেড প্রবাহ’ বলে। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি হবে, জেড প্রবাহ তত শক্তিশালী হবে। উত্তরে কানাডায় এখন তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি। দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়ায় তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি। দুই অঞ্চলের মধ্যে চরম পার্থক্যের কারণে উত্তর থেকে তীব্র গতিতে হাওয়া দক্ষিণের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। ২০১৩ সালেও একই কারণে তীব্র শীত ছিল বলে জানান শামীম হাসান। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শেষবারের মতো তীব্র শীতে কেঁপেছিল দেশ। সে বছরের ৯ থেকে ১৬ জানুয়ারি দুই দফা তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছিল। উত্তরের ১৬ জেলায় তাপমাত্রা নেমেছিল ৫ ডিগ্রির নিচে।