লাল কার্পেটে কালো পোশাক।
এ বছর গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিল এই কালো রং। গত অক্টোবরে হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের নামে প্রথম যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। সেই শুরু। তার পর মুখ খোলেন একের পর এক মহিলা। হেনস্থাকারীর তালিকায় নাম ওঠে কেভিন স্পেসি, লুই সিকে-র মতো জনা পঞ্চাশেক হলিউড তারকার। নিগৃহীত মহিলাদের সহমর্মিতা জানিয়ে শুরু হয়ে #মিটু প্রচার। সকলের মুখেই এক কথা, ‘‘হ্যাঁ, আমিও হেনস্থার শিকার!’
ওয়াইনস্টেইন-পর্বের পরে এই প্রথম কোনও বড় মাপের অনুষ্ঠান হল হলিউডে। যৌন হেনস্থার প্রসঙ্গটি যে সেখানে উঠে আসবে, তা সকলেই অনুমান করেছিলেন। অনুষ্ঠানের আগে রেড কার্পেট পর্বেই দেখা গেল, অতিথিরা প্রায় সকলেই কালো পোশাক পরে এসেছেন। মেয়েরা কালো গাউন, আর ছেলেরা কালো স্যুট, নিদেনপক্ষে কালো টাই বা বো-টাই। বর্ষিয়ান অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপের কথায়, ‘‘আমরা আপনাদের পাশে আছি, নিগৃহীতাদের এই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া খুব জরুরি।’’ বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে মেরিলের মতো অনেক তারকাই লাল কার্পেটে ছবি তোলেন মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক সেথ মেয়ার তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, ‘‘আজকের অনুষ্ঠানে হার্ভি ওয়াইস্টেইন আসেননি। আবার বছর কুড়ি পরে তাঁর নাম হয়তো শোনা যাবে এই অনুষ্ঠানে। যখন ‘এ বছর যাঁরা মারা গেলেন’-এর তালিকায় হার্ভির নাম ঘোষণা করা হবে, আর ধিক্কারে ভরে যাবে প্রেক্ষাগৃহ।’’ বাঙ্ময় নীরবতা নেমে আসে মেয়ারের এই ‘রসিকতা’ শুনে।
এ বারের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট খেতাব দেওয়া হয়েছে টিভি উপস্থাপিকা ওপ্রা উইনফ্রিকে। ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতায় ওপ্রা প্রথমেই বলেন, ‘‘যে সব মেয়ে টিভিতে এই অনুষ্ঠান দেখছেন, তাদের সবাইকে বলছি, দিগন্তে একটা নতুন দিনের সূচনা হচ্ছে।’’ উঠে দাঁড়িয়ে ওপ্রাকে অভিবাদন জানায় গোটা প্রেক্ষাগৃহ। হাততালি চলে বেশ কয়েক মিনিট ধরে।
এ বছর সব থেকে বেশি খেতাব পেয়েছে ‘থ্রি বিলবোর্ডস’— শ্রেষ্ঠ ছবি, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড), শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা (স্যাম রকওয়েল) এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য। ‘ডার্কেস্ট আওয়ার’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন গ্যারি ওল্ডম্যান এবং ‘শেপ অব ওয়াটার’-এর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তকমা জিতে নিয়েছেন গিলের্মো দেল তোরো। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে এই প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পেলেন কোনও এশীয়। ‘দ্য মাস্টার অব নান’ টিভি সিরিয়ালের জন্য খেতাবটি জিতে নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আজিজ আনসারি।
হ্যাঁ, যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে হলিউড। কিন্তু এখনও যে অনেক পথ চলা বাকি। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের নাম ঘোষণা করার সময়ে সেই ইঙ্গিতই করলেন অভিনেত্রী নাতালি পোর্টম্যান। বললেন, ‘‘এ বছর শ্রেষ্ঠপরিচালকের তালিকায় নাম তুলেছেন যে পুরুষরা, তাঁরা হলেন…!’’ সত্যিই তো, সেই ১৯৯২-এ ‘দ্য প্রিন্স অব টাইডস’-এর জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন বারবারা স্ট্রাইস্যান্ড। তারপর তো আর কোনও মহিলা পরিচালককে সম্মান দিল না গোল্ডেন গ্লোব!