একদিকে হাড়ে কামড় বসানো শীত। মানুষও মরছে তাতে। আর অন্য দিকে ভয়াবহ গরমে ত্রাহি দশা। বিশ্বের দুই প্রান্তে আবহাওয়া এখন এমন চরম মূর্তিতে।
উত্তর গোলার্ধের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে ভারী তুষারপাত। সঙ্গে ঝড়। শীতে জবুথবু মানুষের জীবনযাত্রা। কানাডায় তাপমাত্র প্রায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বিপরীত দিকে অস্ট্রেলিয়ার চলছে তীব্র দাবদাহ।
আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রায় পুড়ছে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় শহর সিডনি। গতকাল রোববার শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় পেনরিথ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশটিতে ১৯৩৯ সালের পর তাপমাত্রা এই উচ্চতায় আর কখনো ওঠেনি।
অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে সিডনিবাসীকে। যেকোনো ধরনের আগুন জ্বালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর আগে শনিবার ভিক্টোরিয়া ও সাউথ অস্ট্রেলিয়া রাজ্যে দাবদাহ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র ও স্থলভাগের তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসছে। এর ফলে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। স্থানীয় আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল বিকেল নাগাদ সিডনির সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় তাপমাত্রা কমে আসে। শহরের অন্যান্য অংশে তাপ কমে সন্ধ্যার পর।
সিডনিতে বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর চলছে। ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি ইংল্যান্ড। আর চলছে সিডনি আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতা। দুটি খেলায় অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের ত্রাহি দশা দাবদাহের কারণে। গরমের কারণে কয়েকজন শীর্ষ টেনিস খেলোয়াড় মাঝপথে খেলা থামিয়ে দিয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলোয় গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বছর বছর বেড়ে চলছে; আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিভিন্ন শহরে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল ও কানাডা এখন প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে। কানাডার অন্টারিও ও কুইবেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছাতে চলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট ওয়াশিংটন ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে গত শনিবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যুক্তরাষ্ট্রে হঠাৎ আসা তুষারঝড়কে ‘বম্ব সাইক্লোন’ নামে অভিহিত করেছে গণমাধ্যমগুলো। নিউইয়র্ক, জর্জিয়া, বোস্টন, ফ্লোরিডা, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও সাউথ ক্যারোলাইনায় তুষারঝড়ে কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তুষারপাতে অচল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শহরের জীবনযাত্রা। কয়েক ফুট উচ্চতায় তুষারের স্তর জমে গেছে। বিভিন্ন বিমানবন্দরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে। নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি ও সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটন বিমানবন্দর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিউ ইংল্যান্ড, নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলাইনায় রেল যোগাযোগ বন্ধ কিংবা ব্যাহত হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হয় তুষারঝড়। ভারী তুষারপাতের সঙ্গে ছিল কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। নিউইয়র্ক শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডেলাওয়্যার, নিউজার্সির উপকূল, নিউইয়র্ক ও নিউ ইংল্যান্ডের উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে। আর কানাডা সীমান্তবর্তী নিউইয়র্কের নায়াগ্রা ফলস এখন কার্যত বরফ স্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।