চলতি সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সীমানা নির্ধারণ। পুুরনো সীমানায় এই নির্বাচন চূড়ান্ত করতে চায় ইসি। এ জন্য বর্তমান সংসদীয় আসনের সীমানা আইন দিয়ে ২৯৯টি আসনের সীমানা প্রস্তুত করেছে ইসি। তবে কুমিল্লা-১০ আসনের নাঙ্গলকোট উপজেলার কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের সীমানা গেজেট ঝুলে রয়েছে। চলতি সপ্তাহে আদালতে এ সম্পর্কিত একটি রুল নিষ্পত্তির কথা রয়েছে। ইসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানার সব কাজ শেষ করেছি। নাঙ্গলকোট উপজেলার জন্য আমরা এখন আদালতের দিকে চেয়ে আছি। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। আমাদের আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি এ বিষয়টি নিয়ে শুনানি রয়েছে। সেদিন হয়ত আদালত আমাদের কোনো নির্দেশনা দিতে পারেন। আদালতের নির্দেশনার পর কমিশনাররা বসে দ্রুত কিছু একটা করবে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কুমিল্লা- ১০ আসনটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও নাঙ্গলকোট নিয়ে গঠিত। কিন্তু আদালতের রায় আছে নাঙ্গলকোট উপজেলাকে আলাদা একটি আসন করা অথবা অন্য কোনো আসনের সাথে যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাঙ্গলকোট উপজেলাকে একটি আলাদা আসন করতে গেলে সংসদীয় আসন হবে ৩০১টি, যা ইসির পক্ষে সম্ভব না। আবার অন্য আসনের সাথে যুক্ত করতে গেলে পাশের ফেনী জেলার আসনের সাথে যুক্ত করতে হবে। এটিও ইসির জন্য জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যস্ত সীমানার চূড়ান্ত গেজেট গত ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করার কথা ছিল নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন করার কথা। নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি শেষ করে নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা ছিল ইসির। কিন্তু কোনো কিছুই সঠিক সময়ে করতে পারেনি ইসি। ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুলাই-আগস্টে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করার কথা ছিল। সেই সাথে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা ছিল ইসির।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, এ দু’টি কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সেটিও গত নভেম্বরে এসে। একটা খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে। জিআইএস সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ আর এগোয়নি। এ অবস্থায় ইসি বলছে নতুন সীমানা আইন দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের গেজেট করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান আইন দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯৯ আসনের সীমা প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি আসনের সিদ্ধান্ত আসলে বর্তমান আইন দিয়ে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি।
নতুন যে সীমানা আইন করা হচ্ছে সেটি পরবর্তী কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করা হতে পারে। ইসির সাথে সংলাপে বিএনপি নতুন আইন করে ২০০১ সালে সংসদীয় আসনের যে সীমানা ছিল সেটি ফিরিয়ে আনতে দাবি জানিয়েছিল। কারণ ২০০৮ সালে বেশির ভাগ আসন পরিবর্তন করে ইসি। বিএনপির অভিযোগ, ২০০৮ সালে তাদের আসনগুলোকে ভেঙে দলকে বিপদে ফেলা হয়েছে। করণ যে এলাকায় বিএনপির দু’টি আসনে ভালো সমর্থক ছিল সেখানে একটি করা হয়েছে। ফলে দলীয় একটি আসন কমে গেছে। অন্য দিকে ইসির সাথে সংলাপে আওয়ামী লীগ চেয়েছে বর্তমান আইন দিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন। অর্থাৎ সিটমহলগুলোকে যুক্ত করে ২০১৩ সালের সীমানা দিয়ে নির্বাচন করতে।
ইসির তথ্য মতে, এর আগে ২০০১ সালেও ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ১৯৮৪, ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। এক-এগারো পুনগর্ঠিত ড. শামসুল হুদার কমিশন সারা দেশের পার্বত্য তিনটি জেলা বাদে ২৯৭ আসনেই পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর মধ্যে ১৩৩টিতে পরিবর্তন আনা হয় বড় পরিসরে। এই ব্যাপক সীমানায় ভাঙচুর ও তছনছ করার মাধ্যমে ঢাকায় আসন বাড়ে আটটি, কমে জেলাতে আসন সংখ্যা। সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল ও ফরিদপুরে একটি করে আসন কমে। ২০০৮ সীমানা বহাল রেখে ২০১৩ সালে অল্প কিছু আসনে পরিবর্তন এনে দশম সংসদ নির্বাচন দেয় ইসি।