দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আবারও এমপিওভুক্ত (বেতনের সরকারি অংশ পাওয়া) হচ্ছে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এত দিন কেবল আলোচনা হলেও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল শনিবার বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। বিদ্যমান নীতিমালাটি আরেকটু যুগোপযোগী করার কাজ শুরু হয়েছে।
তবে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না বলে উল্লেখ করেন সচিব। তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে সরকার এ খাতে কত টাকা দিচ্ছে তার ওপর।
সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। তখন সব সাংসদের পছন্দ অনুযায়ী এমপিওভুক্ত করা যায়নি। এ কারণে সাংসদদের তোপের মুখে পড়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ পর্যন্ত এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০ বারেরও বেশি আন্দোলনে নামেন। সর্বশেষ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচির পর গত রোববার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন। গত শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান অনশনস্থলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানান।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৭ হাজার ৮১০টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ৯৪২ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, যদি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকেও এমপিওভুক্ত করা হয়, তাহলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড় শ কোটি টাকা খরচ হবে। আর ৭ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানকে করলে খরচ আরও বাড়বে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রমতে, নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ে সব প্রতিষ্ঠান যোগ্য নাও হতে পারে।
যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) দেওয়া হয়, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত বলা হয়। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।
জানতে চাইলে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী গতকাল শনিবার বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরুর নির্দেশও দিয়েছেন, তাই তাঁরা আশা করছেন, শিগগির এমপিওভুক্তি শুরু হবে।