এম আরমান খান জয়,রাঙ্গামাটি থেকে ফিরে :
এই শীতে কোথায় যাওয়া যায় এই প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই জেগে চলেছে। এক্ষেত্রে আমার প্রথম পরামর্শ রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই লেকের বুকে জেগে থাকা ছোট্ট একটি শহর রাঙ্গামাটি। এই শহরের বুকচিরে বয়ে চলা লেকের বাঁকে বাঁকে রয়েছে অসংখ্য বৈচিত্রের ভান্ডার। রাঙ্গামাটির উত্তরে খাগড়াছড়ি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজরাম রাজ্য পশ্চিমে চট্টগ্রাম। তবে মেঘের সাথে পাহড়ের মিতালি দেখতে চাইলে বর্ষাকলে যাওয়াই উত্তম। স্বচ্ছ জলে লেকের বুকে ঝিরি ঝিরি বাতাসে নৌকা ভ্রমন আপনাকে বার বার নিউজিল্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দিবে এতে কোন সন্দেহ নাই। রাঙ্গামাটির কথা মনে পড়েলে প্রথমেই কল্পলোকে যে ছবিটি মনের কোনে ভেসে ওঠে সেটি হচ্ছে ক্যালেন্ডারের পাতায় স্থান পাওয়া রঙ্গিন একটি ঝুলন্ত সেতু। পর্যাটন কম্পেক্সের ভিতর রয়েছে এই ঝুলন্ত সেতুটি। প্রবেশ মূল্য মাত্র পাঁচ টাকা তবে অসাধু লোকজন চেষ্টা করবে বেশী টাকা রেখে দিতে। যদি ভাংতি টাকা নাদিয়ে পঞ্চাশ টাকার নোট দেন তাহলে পুরাটাই রেখে দিবে। সাবধান সংঙ্গে খুচরা টাকা নিয়ে যাবেন। এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় যাদুঘর, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, বাংলাদেশের সবথেক উঁচু প্রাকৃতিক ঝর্ণা শুভলং, পেদা টিং টিং, তবলছড়ি বাজার, রিজার্ভ বাজার, কশেলং মাইনিমুখ, বুড়িঘাট, রাঙ্গাপানি, কর্ণফুলি কাগজকল, বেতবুনিয়া ভূ-ঊপগ্রহ কেন্দ্র, কাপ্তাই বাঁধ ইত্যাদি। রিজার্ভ বাজার থেকে বিভিন্ন সাইজের নৌকা ভাড়া করতে পারেন ৪৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার বিনিময়। তবে সাবধান দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। দালালরা সাধারনত নৌকা ঠিক করার বিনিময়ে ২/৩ শত টাকা আপনার পকেট থেকে হাতিয়ে নিবে বিভিন্ন কৌশলে। যেমন ধরুন ইঞ্জিন নৌকার প্রকৃত ভাড়া ৫০০ টাকা, দালাল সাহেব বুঝাবেন নৌকার বঢ়ই ক্রাইসিস, সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে তবে ওনার সন্ধানে একটা নৌকা আছে আপনি যদি রাজি থাকেন খোঁজ নিয়ে কথা বলতে পারেন।
আপনি নিরূপায় কারন নতুন এসেছেন কোথাও চিনেন না, তাই রাজি না হয়ে উপায় কি? দালাল ভাই আপনার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে যাবে যে আপনি রাজি। সে বলবে ২৫০০ টাকা চাইতেছে নৌকার চালাক, তবে চলেন আমার সাথে কমিয়ে ঠিক করে দিব। এবার গেলেন পিছন পিছন, নৌকার মাঝির সংঙ্গে ওনার আগেই কন্ট্রাক্ট করা। দর কষা কষির এ্যকটিং শেষে এক পর্যায়ে মাঝি ভাই ২০০০ টাকায় রাজী হবেন। দালাল ভাইকে অনেক বিশ্বস্ত মনে করে আপনি ধন্যবাদ দিয়ে চলে যাবেন। এবার মাঝির কাছ থেকে দালাল ভাই ২০০ টাকা কমিশন নিয়ে পকেট গরম করবেন। বিনা পুঁজির ব্যবসা……….প্রতিদিন দু’চারজন কাষ্টমার এমনিতেই জুটে যায়।
শুভলং যাবার পথে পেদা টিং টিং নামক অবকাশ কেন্দ্রে নাস্তা সেরে নিতে পারেন কারন সামনে আর কোন হোটেল চোখে পড়বে না। তবে দর দাম না করে কোন খাবারের অর্ডার দেওয়া নিতান্তই বোকামী হবে। একটা কথা জানিয়ে রাখি যেহেতু রাঙ্গামাটির বুক চিরে চলে গেছে লেক তাই কোন পর্যাটন কমম্পেক্সে যেতে আপনাকে সড়ক পথে ভ্রমন করার দরকার হবে না। সবগুলো স্পটেই আপনি ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে পারবেন। লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ পাহাড় আপনার মনকে এতই নাড়া দিবে যে মন চাইবে এখানেই আবাস গড়তে। এত সুন্দর আমাদের দেশ ! অথচ
আমরা চলেছি মনের খোরাক মিটাতে ভিন দেশে? একবার নিজের দেশ ঘুরুন দেখবেন কত সুন্দর এই সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা আমাদের এই বাংলা। তার পর না হয় বিদেশ যাওয়া যাবে।
শ্যালো ইঞ্জির অবিরাম ভড ভড শব্দ আপনার কান ঝালা পালা করে দিবে তবে ৩০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শুভলং ঝর্ণা থেকে ঝরে পড়া অবিরাম পানির ধারা চোখের নাগালে আসা মাত্রই আপনার ঝালা পালা কানের তালা একেবারেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিষ্ময় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবেন ওটার দিকে; গোসল করার যাবতীয় উপকরন সংগে নিতে ভুল করবেন না। স্বচ্ছ পানিতে গোসল না সেরে ফিরতি পথ ধরলে আপনার মন অতৃপ্ত রয়েই যাবে।
যখন ফেরার পথ ধরবেন মনে হবে কি যেন একটা রেখে চলেছেন এই কাপ্তাই লেকের বুকে ! বিষন্ন মনে যান্ত্রিক জীবনে প্রবেশ করলেও সেই আনন্দক্ষণ মূহুর্তটাকে মনের কোনে রেখে দিতে পারবেন দীর্ঘদিনের স্মৃতি হিসাবে। যারা এই নয়নাভিরাম ও অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাখেলা দেখতে চান বা উপভোগ করতে চান বা স্মৃতির পাতায় এই অপরূপ দৃশ্য বাঁধিয়ে রাখতে চান তারা আর দেরি না করে উপভোগ করে আসুন রাঙামাটি।