একটি বই প্রকাশ নিয়ে তুলকালাম চলছে মার্কিন মুল্লুকে। একদিকে প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে বইটির লেখক-প্রকাশক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাচ্ছেন যে কোনো উপায়ে এটির প্রকাশনা বন্ধ করতে। এজন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পাঠিয়েছেন লিগাল নোটিশ। ওদিকে প্রকাশকও নাছোড়বান্দা। তিনি আলোর মুখ দেখাবেনই বহুল আলোচিত বইটিকে। তাই ঘোষণা দিয়েছেন, নির্ধারিত তারিখের কয়েকদিন আগে গতকাল শুক্রবারই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।
বইটির নাম Fire and Fury: Inside the Trump White House. লিখেছেন প্রথিতযশা সাংবাদিক মিশেল ওলফ। হোয়াইট হাউজে দীর্ঘদিনের যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা এ বই; যাতে স্থান পেয়েছে ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজে তার আশেপাশের দুই শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ভিত্তিক নানা তথ্য। কী আছে বইটিতে? প্রকাশের আগে এ চুম্বক কিছু তথ্য তুলে ধরেছে মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পাঠকদের জন্য সেখান থেকে কিছু ঘটনা ও উদ্ধৃতি এখানে তুলে দেয়া হল-
১. ইভানকা ও তার স্বামী জ্যারেড কুশনার নিজেদের মধ্যে আলাপ করে স্থির করেছেন, ভবিষ্যতে তাদের মধ্য থেকে কাউকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হলে কে করবেন। দুইজনেই একমত হয়েছে যে, ইভানকাই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন।
২. হিকসের সাথে ট্রাম্পের খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ঘনিষ্টজনেরা তাকে ট্রাম্পের মেয়ের মতো মনে করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প ও তার নিজের মেয়ে ইভানকার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা নেই হোয়াইট হাউজ স্টাফদের মধ্যে। ওলফ তার বইয়ে লিখেছেন, আসলে হিকস হচ্ছে ট্রাম্পের সত্যিকারের মেয়ে, আর ইভানকাকে মনে করা হয় তার সত্যিকারের স্ত্রী!
৩. ট্রাম্পে নিজেও বিশ্বাস করতেন না তিনি নির্বাচনে জিতে যাবেন। তার প্রচারণা ক্যাম্পের কেউও তা বিশ্বাস করতো না। ৪৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ায় গিয়ে একটি বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুাবে রাজি হওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্ট মাইকেল ফ্লিন তখন বলেছিলেন, যদি আমরা নির্বাচনে জিততাম তাহলেই শুধু এটা (রাশিয়ায় গিয়ে বক্তব্য দেয়া) সমস্যার সৃষ্টি করতো। অর্থাৎ, নির্বাচনে জিতবেন না এটা ধরে নিয়েই ৪৫ হাজার ডলারের লোভনীয় প্রস্তাবটি হাতছাড়া করতে চাননি ফ্লিন!
৪. ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও হোয়াইট হাউজের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন নিজেই স্বাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চলার সময় ট্রাম্প টাওয়ারে রুশ সরকারের সাথে সংযোগ থাকা এক আইনজীবীর সাথে বৈঠক করেন হবু প্রেসিডেন্ট। ওলফের বইয়ে ব্যানন এই বৈঠককে রাষ্ট্রদ্রোহী ও দেশপ্রেমবিরোধী বলে অভিহিত করেন।
৫. হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক হোপ হিকস এবং ট্রাম্পের সাবেক ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কোরে লিওয়ান্ডোস্কির মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো। এক পর্যায়ে কোরেকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। এরপর একদিন হিকসকে ট্রাম্প জিজ্ঞেস করলেন, ওকে বরখাস্ত করার পর তোমার মন খারাপ হয়েছিলো কেন? তার জন্য অনেক করেছো। তোমার মতো কোমরওয়ালা মেয়ে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।
৬. ট্রাম্প প্রায়ই ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে খাবার খান। তার ভয়, হোয়াইট হাউজে তার জন্য প্রস্তুত করা খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়া হতে পারে! ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে খেলে আগে থেকে সে খাবারে কারো বিষ মেশানোর সুযোগ থাকবে না।
৭. সহযোগী ও নিজের ঘনিষ্টজনদের কারো সাথে ফোনে কথা বলা শেষে ওই ব্যক্তির ভুলত্রুটি নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন ট্রাম্প। যেমন উপদেষ্টা ব্যাননের ব্যাপারে একবার বলেছিলেন, ব্যানন মোটেও অনুগত নয়। তার বিশ্রি চেহারার কথা নাই বা বললাম! আর প্রিবাস (সাবেক উপদেষ্টা) খুবই দুর্বল লোক। ও যে একটা বাইট্টা তা আর বললাম না! অন্যাদের ব্যাপারেও এমন অনেক মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। এমনকি এমন বিদ্রুপ থেকে বাদ যাননি ট্রাম্পের নিজের জামাত জ্যারেড কুশনারও।