তৈরি পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিতে এ খাতের মালিক-শ্রমিকের বিদ্যমান সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, ‘মালিকদের মনে রাখতে হবে শ্রমিক ও মালিক একে অপরের পরিপূরক। শ্রমিক না থাকলে মালিকের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই শিল্পকে বাঁচাতে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিকল্প নেই।’ তিনি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে টেকসই শিল্পে রূপান্তর করতে সব কারখানার কর্মপরিবেশ আরো উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মঙ্গলবার ঢাকায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জেন্ডার সমতা বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০টি পোশাক কারখানার মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহায়তায় শ্রম মন্ত্রনালয় ও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে সব চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে। এই খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই হলো নারী শ্রমিক। যেখানে এতো নারী শ্রমিক কাজ করে সেখানে পুরুষ শ্রমিকের দ্বারা নারী নির্যাতন কঠিন বিষয়। তবে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে জেন্ডার বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মালিকদের উদ্দেশ্য মুজিবুল হক বলেন,‘ সরকার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন সব ধরণের সহায়তা দিচ্ছে। আপনারা কাজের পরিবেশ উন্নত করুন। এই খাতকে আরো টেকসই করতে হলে সব কারখানায় ভয়মুক্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ আবাসিক প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিকসিন বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকরা কর্মপরিবেশ ঝুঁকি থেকে শুরু করে কারখানার গেটম্যানের ভয়ে থাকে। বিশেষ করে পুরুষ শ্রমিক দ্বারা হয়রানি হওয়ার ভয় পায়। এতে নারী শ্রমিকরা মানসিক হয়রানিতে থাকে। তিনি বলেন, কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হলে এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এতে উৎপাদনশীলতা আরো বাড়বে বলে মনে তিনি করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, কেবল নারী নয়, সমগ্র পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। এতো বড় শিল্পে পুরুষ কর্মী দ্বারা হয়রানির মতো বিষয় থাকতে পারে। তবে পোশাক শিল্পের কারণে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরাই নারী শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। যার ফলে বাল্যবিবাহসহ অন্যান্য সামাজিক ব্যাধি হ্রাস পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ড. জুলিয়া আহমেদ বলেন, পোশাকশিল্পে ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ নারী শ্রমিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসহ অন্য যেকোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে শ্রম সচিব মিখাইল শিপার, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম, এস এম মান্নান কচি ও রিয়াজ বিন মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।