ভারতে দু’জন মেয়ে শিক্ষার্থী একদল লোকের হামলার শিকার হয়েছেন। তারা দু’জন মুসলিম তরুণের সাথে দেখা করেছিল বলে এ ঘটনার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্ণাটক রাজ্যের ম্যাঙ্গালোরের একটি থিম পার্কে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, তারা তিনজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যারা একটি ডানপন্থী গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত।
ওই ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অনেকে একে ‘মরাল পুলিশিং’ বলেও বর্ণনা করছেন।
ভারতের গণমাধ্যম বলছে, ওই ছাত্র-ছাত্রীরা একই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
পুলিশ বলছে, পার্কের ভেতরে প্রথমে কয়েকজন ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। পরে তারা ডানপন্থী ওই গ্রুপের লোকজনকে ডেকে আনে। তারা এসেই ওই মেয়েদের ধরে মারধর শুরু করে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের তারা দফায় দফায় মারছে, ধমকাচ্ছে, আর বার বার তাদের বাবা-মাকে আসার জন্য ফোন করতে বলছে। এমনকি যখন তাদের পুলিশ পার্ক থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে, তখনো তাদের চিৎকার করে গালাগালি করছিল ওই ব্যক্তিরা।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় আরো কয়েকজন গ্রেফতারের জন্য তারা খুঁজছে।
ম্যাঙ্গালোরে এ ধরণের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে বারে এবং বাড়ির পার্টিতে মেয়েদের উপর হামলা আর হিন্দু সহকর্মীদের দ্বারা মুসলিম যুবককে মারধর করার মতো ঘটনা।
দলিতদের ওপর হামলা, বিক্ষোভে উত্তাল মহারাষ্ট্র
ভারতীয় সমাজে অপোকৃত অনগ্রসর দলিত সম্প্রদায় বিভিন্ন দাবিতে বুধবার মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্র রাজ্যজুড়ে এবং আরো কিছু অঞ্চলে বিােভ করছে। মহারাষ্ট্রে এ দিন ধর্মঘট ডেকে তা সফল করতে রাস্তায় নেমে এসেছে দলিত সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। পুনে ও থানেতেও বিােভ চলছে। এ নিয়ে গতকাল উত্তপ্ত ছিল লোকসভা। বিরোধী দল কংগ্রেস এ বিষয়ে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি তোলে।
দলিতরা বিক্ষোভ শুরু করে সোমবার থেকে। ওই দিন দলিতদের প থেকে ঐতিহাসিক ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় অজ্ঞাত লোকজনের হামলায় দলিত এক যুবক নিহত হওয়ার পর থেকে সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এটিকে জাতিগত সহিংসতা অথবা দলিত ও উচ্চবর্ণের সংঘর্ষ বলে প্রচার হচ্ছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে একে মারাঠা ও দলিতদের মধ্যে সহিংসতা বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিােভে উত্তাল ছিল পুনে। এ দিন মুম্বাইয়ের রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। গোটা মুম্বাইয়ে বিােভের ঢেউ লেগেছিল। বেশির ভাগ রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেয় বিােভকারীরা। বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করে তারা। বেশ কিছু এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে তিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৩টি বাস।
বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে বেশির ভাগ ট্রেন সার্ভিস স্থগিত করা হয়। ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিক ও দলিত নেতা ভিমরাও রামজি আম্বেদকারের নাতি প্রকাশ আম্বেদকার বুধবার মুম্বাইয়ে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ ভোর থেকে রাস্তায় অবস্থান নেয়। বিােভ দমনে মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়।
মহারাষ্ট্রে দলিত ও কট্টর হিন্দুদের সংঘর্ষ, দেড় শ’ বাসে আগুন
ভারতের মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় দলিত সংগঠনগুলোর বিক্ষোভের ফলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রাথমিকভাবে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী ও দলিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয় সোমবার। তারপরেই হাজারে হাজারে দলিত শ্রেণীর মানুষ মুম্বাই শহরের উপকণ্ঠ সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
মঙ্গলবার প্রায় দেড় শ’টি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। বহু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রেন ও বিমান পরিষেবাও বিঘ্নিত থেকেছে সারাদিন।
বুধবার মহারাষ্ট্রে রাজ্যব্যাপী বনধের ডাক দিয়েছেন দলিত নেতা প্রকাশ আম্বেডকার এবং আটটি দলিত সংগঠন।
ঘটনার শুরু পুণে শহর থেকে।
সোমবার দলিত সংগঠনগুলো পুণেতে এক বিশাল সমাবেশ করেছিল ২০০ বছর আগের এক যুদ্ধ জয়ের বিজয় দিবস পালন করতে।
ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধ নামে পরিচিত ওই যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী পুণের ব্রাহ্মণ পেশোয়া রাজাদের পরাজিত করেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীতে বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন ‘মাহার’ নামক দলিত শ্রেণীর মানুষ।
ব্রাহ্মণ রাজাদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধজয়কে দলিত সংগঠনগুলো এখন পালন করতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী আর এস এস-এর মতাদর্শের বিরুদ্ধে জয় হিসাবে।
ওই সমাবেশে গুজরাতের দলিত নেতা জিগনেশ মেওয়ানী, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা উমর খালিদ সহ জাতীয় স্তরের দলিত নেতা নেত্রীরা হাজির ছিলেন।
সেখান থেকেই একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা পাথর ছোঁড়েন , যার জেরে শুরু হয় সহিংসতা।
ধীরে ধীরে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও।
একদিকে মুখ্যমন্ত্রী দেভেন্দ্র ফাদনবীশ, অন্যদিকে দলিত নেতৃত্ব – দুই তরফেই শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে।
তবে বিবিসি-র মারাঠি বিভাগ জানাচ্ছে সোমবারের হিংসাত্মক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার। (২ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদ)