এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আমরণ অনশনের চতুর্থ দিনে গতকাল বুধবার শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতি আরও বেড়েছে। এদিন নতুন করে আরও ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ৭১ জন অসুস্থ হলেন। কেউ কেউ স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আশ্বাস প্রত্যাখ্যানের পর অনশনরত শিক্ষকদের একটাই বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে। তাঁরা বলছেন, দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে জীবন দেবেন।
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচির পর গত রোববার আমরণ অনশন শুরু করেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনশনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ শিক্ষক জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত ও সামনের একাংশে শুয়ে আছেন। কেউ কেউ বসে আসেন। কয়েকজনকে স্যালাইন নিয়েই শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবীকেও স্যালাইন নিয়ে অনশন পালন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, জীবন গেলেও দাবি পূরণ ছাড়া এখান থেকে যাবেন না।
অনশনে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা দাবির সমর্থনে বক্তৃতা করেন। বিকেলে আবারও অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী বেশি। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা বলেছেন, এখন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষকেরা আসছেন। অনেকে যোগাযোগ করছেন।
অনশনে অংশ নিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষার সহকারী শিক্ষক মো. সানোয়ার হোসেন। বললেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। তিনি শুরু থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু সরকার থেকে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। কীভাবে চলেন, জানতে চাইলে সানোয়ার হোসেন বললেন, সংসারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত দাবি পূরণ না হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত তাঁরা এখানে থাকবেন বলে তিনি জানান।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা এলেই কেবল তাঁরা অনশন ভাঙবেন। দাবি পূরণ ছাড়া যাবেন না।
২০১০ সালের পর নতুন করে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। বর্তমানে সারা দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাই আন্দোলন করছেন। এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মূল বেতনসহ কিছু ভাতা পান
মাদ্রাসার শিক্ষকদের অবস্থানও চলছে
মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ওই সব মাদ্রাসার শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল গতকাল। জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের আরেক পাশে চলছে এই কর্মসূচি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা বসে থাকার পাশাপাশি কেউ কেউ বক্তব্যও দিচ্ছেন। বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সংগঠনটির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী গতকাল বলেন, সরকার থেকে কেউ তাঁদের কাছে আসেননি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
একটি বিদ্যালয় সরকারি করতে মানববন্ধন
সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের পশ্চিম পাশে কুষ্টিয়ার কুমারখালী এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কুষ্টিয়া জেলা সমিতি। ২০০৮ সালে প্রথমে যে ৬০টি বিদ্যালয় সরকারীকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে এই বিদ্যালয়ের নামও ছিল। পরে জটিলতার মারপ্যাঁচে সেটা আটকে যায়।