বিস্ময়কর বৈকাল হ্রদ

Slider সারাবিশ্ব

682e2b5216819e063dd52e57d5f7f924-5a4da681eb9bd

 

 

 

 

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন আর গভীরতম সুপেয় পানির হ্রদ বৈকাল। আয়তনের দিক থেকেও এটি বৃহত্তম। এই হ্রদের অবস্থান রাশিয়ার সাইবেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি এই বৈকাল হ্রদকে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয় ইউনেসকো।

আসুন জেনে নিই, বিস্ময়কর এই হ্রদ সম্পর্কে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১. ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ায় বৈকাল হ্রদের জলসীমা গড়িয়েছে সাইবেরিয়ার ইর্কুৎস্ক অঞ্চল ও বুরিয়াতিয়া প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত। এটি দৈর্ঘ্যে ৬৩৬ কিলোমিটার ও চওড়ায় সর্বোচ্চ ৮১ কিলোমিটার। রুশদের কাছে বৈকাল ‘সাইবেরিয়ার মুক্তা’ নামে পরিচিত।

২. রাশিয়ায় প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ বৈকাল দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ সময় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

৩. সাইবেরিয়ার এই বৈকাল হ্রদ ছাড়াও গোটা রাশিয়ায় বিশেষ করে ইয়াকুতিয়া ও টমস্ক অঞ্চলে আরও বেশ কয়েকটি বড় হ্রদ রয়েছে। মজার বিষয়ে হচ্ছে, আয়তনে বড় এমন কয়েকটি হ্রদের নামও বৈকাল।

৪. বৈকাল হ্রদের নামকরণ নিয়েও নানা মত রয়েছে। তবে রাশিয়ায় সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, তিইউরস্কি ভাষার ‘বাই-কুল’ আঞ্চলিক শব্দ থেকেই বৈকাল নামের উৎপত্তি। যার রুশ ভাষায় অর্থ দাঁড়ায় ‘বাগাতোয়ে অঝেরা’, অর্থাৎ ‘সম্পদশালী হ্রদ’।

৫. বৈকাল হ্রদ ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ। বৈকালের তলদেশে বছরে কয়েক শ ভূমিকম্প হয়। তবে এর অধিকাংশই মৃদু ভূমিকম্প।

৬. বৈকাল হ্রদের সর্বোচ্চ গভীরতা ১ হাজার ৬৪২ মিটার নিশ্চিত করতে গবেষকেরা ২০০২ সালে হ্রদের ১৩ লাখ ১২ হাজার ৭৮৮টি স্থানে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

৭. স্বচ্ছ পানির হ্রদ হিসেবেও বিশ্বজুড়ে বৈকালের পরিচিতি রয়েছে। বৈকালের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে এর উপরিভাগ থেকে হ্রদের তলদেশের সর্বোচ্চ ৪০ মিটার পর্যন্ত খালি চোখে দেখা যায়।

৮. পৃথিবীর ১৯ ভাগ বিশুদ্ধ পানি এই হ্রদে রয়েছে। বৈকালে পানি রয়েছে ২৩ হাজার কিউবিক কিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের সব কটি বড় হ্রদের মোট পানির চেয়ে বেশি।

৯. বৈকাল হ্রদের উপরিভাগের আয়তন হচ্ছে প্রায় ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার। বলা হয়ে থাকে, আর্মেনিয়া, আলবেনিয়া বা মাল্টার মতো দেশ অনায়াসে বৈকালের আয়তনে স্থানান্তর করা যাবে।

১০. শীতকালে হ্রদের পানি বরফের আস্তরণে ঢেকে যায়, বরফের স্তরগুলো এতই পুরু থাকে যে প্রাইভেট কার বা মাঝারি ধরনের গাড়ি নিয়ে বৈকালের বুকে ঘুরে বেড়ানো যায়। চাইলে তখন বৈকালের বুক আইস স্কেটিংও করতে পারবেন।

১১. অন্তত ৩৬০টি নদীর পানি এসে বৈকালে পড়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নদী সেলেঙ্গার উৎপত্তি হচ্ছে মঙ্গোলিয়ায়, যার দৈর্ঘ্য ১০২৪ কিলোমিটার। অন্যদিকে, শুধু আঙ্গারা নদীর মাধ্যমে হ্রদের পানি বাইরে নিষ্কাশিত হয়।

১২. ছোট-বড় মিলিয়ে বৈকালে রয়েছে ৩০টি দ্বীপ। সবচেয়ে বড় দ্বীপটি ওলখন, যার অবস্থান বৈকালের একদম প্রাণকেন্দ্রে। দ্বীপটি লম্বায় ৭১ দশমিক ৭ কিলোমিটার আর চওড়ায় ১৪ কিলোমিটার। বৈকালের অন্যান্য দ্বীপের চেয়ে এই দ্বীপেই পর্যটকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

১৩. রাশিয়ার রহস্যঘেরা বৈকাল হ্রদের কথা একাধিকবার তুলে আনা হয়েছে সেলুলয়েডের পর্দায়। তৈরি হয়েছে অনেক তথ্যচিত্র, কমেডি ও গবেষণাধর্মী ছবি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বৈকালহীন’ নির্মাণ করেন ইর্কুৎস্কের পরিচালক আলেক্সান্দার গারনোভস্কি। বৈকালের তীরে বাস করা একদল লোকের গল্প নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে। এই হ্রদ ও আশপাশের পরিবেশ রক্ষায় কীভাবে তারা নিজেরাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা-ই ছবিতে দেখানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *