শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আজ বুধবার বিকেলে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়। এজন্য তাকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মসম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব হিসেবে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ দায়িত্ব পালন করবেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব পদাধিকার বলে এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল সিনিয়র সচিব হন তিনি। গত বছরের ৩০ জুন মোশাররফের অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে সরকার তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিয়োগ দেয়।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে সহকারী কন্ট্রোলার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস পদে যোগদানের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করেন। চাকরি জীবনে তিনি প্রথম পর্যায়ে প্রতিরক্ষা অর্থ বিভাগ এবং হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং বাণিজ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কাজ করেন।
মোশাররফ হোসেন ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের (তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব নিয়োগ পান। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় মোশাররফ হোসেন গ্রেফতার হয়েছিলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার প্রধান আসামি সেতু বিভাগের সাবেক এই সচিব। কারণ ওই সময় সেতু সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
অভিযোগ ওঠার পর মোশাররফ ভূঁইয়াকে সেতু বিভাগের সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে বসানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদে। এরপর বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে মোশাররফ হোসেনকে ছুটিতেও পাঠানো হয়েছিল। ছুটিতে থাকা অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়। এ সময় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। গ্রেফতার হওয়ায় ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। পরে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কথিত দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। এজন্য তাকে চাকরিতে স্বসন্মানে ফিরিয়ে আনা হয়।