আজ ১ জানুয়ারি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্য ও সংগীতের কীর্তিমান এই কবি পল্লীর জনগণের সুখ-দুঃখ এবং তাদের জীবনধারার ওপর চিরায়ত রচনাসম্ভারের মাধ্যমে পল্লী কবি হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন।
কবি জসীম উদ্দীন ১৯০৩ সালে ফরিদপুর জেলার আম্বরখানা গ্রামে জন্মগহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই কবি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তিনি ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও ফরিদপুর জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং এরপর এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৩১ সালে দীনেশচন্দ্র সেনের সঙ্গে লোকসাহিত্য সংগ্রহ কাজে চাকরি করেন। ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগদেন। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সন্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রী প্রদান করে।
বাংলা সাহিত্যে কবি জসীম উদ্দীনই প্রথম যিনি পল্লীর জনগণের জীবন, সংস্কৃতি, তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে ব্যাপকভাবে কবিতা, নাটক, গান রচনা করে খ্যাতিলাভ করেন। কবি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখনই তার বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতা বাংলা পাঠ্য বইয়ে স্থান পায়। লিখেছেন অসংখ্য গান।
তার লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমার সোনার ময়না পাখি, আমার গলার হার খুলে নে, আমার হাড়কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, আমায় এত রাতে, কেমন তোমার মাতা পিতা, নদীর কূল নাই কিনার নাই রে, ও বন্ধু রঙিলা, রঙিলা নায়ের মাঝি, ও আমার দরদী আগে জানলে, প্রাণ সখিরে ওই কদম্ব তলে বংশি বাজায় কে প্রভৃতি । তার বেশ কয়েকটি নাটকও বাংলা নাটকের ভিড়ে অমর রচনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। লিখেছেন উপন্যাস ও ভ্রমণ কাহিনী।
কবির কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রাখালী (১৯২৭), নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), বালুচর (১৯৩০), ধানক্ষেত (১৯৩৩), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪), হাসু (১৯৩৮), রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫), রূপবতী, মাটির কান্না, এক পয়সার বাঁশী, সকিনা, সুচয়নী, ভয়াবহ সেই দিনগুলোতে, হলুদ বরণী, জলে লেখন, কাফনের মিছিল ও কবর।
নাটকের মধ্যে রয়েছে- পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লীবঁধূ, গ্রামের মেয়ে, ওগো পুষ্পধনু ও আসমান সিংহ।
আত্মকথা- যাদের দেখেছি, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জীবনকথা ও স্মৃতিপট। এ ছাড়া চারটি উপন্যাস, চারটি ভ্রমণ কাহিনী, দুটি গানের বই রয়েছে। কবি একুশে পদক (১৯৭৬), স্বাধীনতা পদক (১৯৭৮), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।