জাপানে ভেসে আসছে একের পর এক ভূতুড়ে জাহাজ। একটি দুটি নয়, শুধু এ বছরেই জাপান জলসীমায় সনাক্ত করা হয়েছে ৯৬টি ভূতুড়ে জাহাজ।
আর এসব জাহাজের বেশ কয়েকটি ভিড়েছে জাপানের উপকূলে।
ভূতুড়ে জাহাজগুলোর কয়েকটির ভেতরে কোনো মানুষ পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটির ভেতরে পাওয়া গেছে মৃতদেহ। এ বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৭টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে এসব জাহাজ থেকে।
পরপর ভেসে আসা ভূতুড়ে জাহাজের কারণে ছড়াচ্ছে নানা গুজব। এগুলোতে পাওয়া মৃতদেহগুলো নিয়েও বিপাকে পড়েছে জাপানিরা।
স্থানীয় জাপানি গ্রামের ব্যক্তিরা জানেন না, কিভাবে এ মৃতদেহগুলোর সৎকার করবেন। তাই বৌদ্ধ রীতি মেনেই যতটা সম্ভব তারা সৎকার করছেন মৃতদেহগুলোর। কিন্তু তবু অসন্তোষ যাচ্ছে না।
হাজার মাইল দূর থেকে আসা মৃতদেহগুলোও তাদের বিচলিত করছে।
প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে মৃতদেহ ভর্তি এই জাহাজ? জাহাজের মতো দেখতে হলেও এগুলো আদতে নৌকা। ভেতরে আছে মৃতদেহের সারি।
চলতি মাসে এমন মোট চারটি নৌকা ভেসে এসেছে। আর চলতি বছরে এই ধরনের ৫৯টি ভূতুড়ে জাহাজ জাপান উপকূলে ভিড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া থেকে ভেসে এসেছে এই অভিশপ্ত জলযান।
কয়েকদিন আগে জাপানের উত্তরাঞ্চলের আকিতা উপকূলে ভাঙাচোরা একটি নৌকা ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ পরে সেই নৌকা থেকে আটটি মৃতদেহ উদ্ধার করে।
বেশির ভাগ মৃতদেহ পচে গলে গিয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা যায় অনেক দিন ধরেই মৃতদেহ নিয়ে নৌকাটি সমুদ্রে ভাসছে। নৌকার গঠন ও মাস্তুল দেখে সেটিকে কোরীয় রীতিতে তৈরি বলে মনে করা হয়েছে। পরে সেই নৌকায় মিলেছে উত্তর কোরিয়ায় তৈরি সিগারেটের প্যাকেট। এরপরই ধরে নেওয়া হয় উত্তর কোরিয়া থেকে মৃতদেহ বোঝাই হয়ে জাপানের উপকূলে ভেসে এসেছে জলযানটি।
পর পর মৃতদেহ ভর্তি জলযান জাপানের উপকূলে ভেসে আসছে দেখে চিন্তিত সরকার। বিশেষ নির্দেশ জারি করে কোস্ট গার্ড ও পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয়রাও বিব্রত এত মৃতদেহ দেখে।
কিন্তু কেন আসছে এ মৃতদেহভর্তি জাহাজগুলো? এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়ার খাদ্য ঘাটতি চলছে। সে দেশের লাগোয়া উপকূলে মিলছে না মাছ। বেশি মাছের আশায় দূর সমুদ্রে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে।
উত্তর কোরিয়া থেকে জাপানের দূরত্ব হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। তার পরেও এতদূরের সমুদ্রপথ পারি দিচ্ছে কাঠের নৌকাগুলো। এগুলোতে চড়ে মাছ ধরছে উত্তর কোরিয়ার সাহসী জেলেরা।
তবে মাঝ সমুদ্রে এসব কাঠের ছোট জাহাজ প্রায়ই বিপদে পড়ে। উত্তাল সমুদ্রে যাচ্ছেন সেই কাঠের জাহাজ তেমন উপযোগী নয়। ফলে দূর সমুদ্রে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। ফেরার উপায় থাকছে না। খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে মাঝ সমুদ্রেই মৃত্যু হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। পরে মৃতদেহসহ এর কিছু গিয়ে ভিড়ছে জাপানে। তৈরি হচ্ছে ভূতুড় জাহাজের গুজব।