বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দুটো দ্রুত সমাপ্তির পথে রয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, এ দু’টি মামলা এবং এর সম্ভাব্য রায় নিয়ে তারা বিচলিত নন। তারা মনে করেন, মামলার কাগজপত্র, সাী, তথ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নেয়া হলে খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন। তবে তাদের শঙ্কা অন্যত্র। তারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এ মামলাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সরকার। তবে সেটি করা হলে রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে এমন আভাসও দিয়েছেন তারা।
দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে চেয়ারপারসনের মামলা ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানামুখী আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা চলমান রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। বিএনপিকে চাপে রাখতেই সরকার মামলাকে কাজে লাগাতে চায়।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সর্বশেষ দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া নিজেও বলেছেন, ‘তিনি বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য।’ জানা গেছে, যদি মামলার রায় বিএনপির বিরুদ্ধে যায়, তাহলে রাজনৈতিক লড়াই ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সেটি মোকাবেলা করা হবে। দলটি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি মামলা দায়ের করা হয় বিগত সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সময়ে। বাকি ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। হত্যা, সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। ১৭টি মামলায় ইতোমধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আরো এগিয়ে রয়েছে। এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। পরবর্তী তারিখ রয়েছে ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দু’টি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দায়ের করা। মামলার নথি অনুযায়ী ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও রয়েছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, যেহেতু এই দু’টি মামলায় কোনো শক্ত অভিযোগ নেই, যদি সুবিচার হয়, তাহলে আদালত থেকে খালাস পাবেন চেয়ারপারসন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মনে করেন, নিরপেভাবে বিচার করা হলে খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ খালাস পাবেন। তার বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, দুদক প্রমাণ করতে পারেনি। সাবেক এই আইনমন্ত্রী আরো বলেন, প্রথমত, সাীরা একেকজন একেক কথা বলেছেন। দ্বিতীয়ত, এই মামলা যে কারণে করা হলো অথচ কোনো কাগজে তার সই নেই, কোনো ব্যাংক চেকে সই নেই। তৃতীয়ত, বিএনপি চেয়ারপারসন এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নন, ট্রাস্টের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই, কোনো সম্পর্ক নেই। একটি ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য যে লোকজন থাকে, তিনি সেখানেও নেই। এমনকি আদালতে তার সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পারেনি। তাহলে প্রাক ধারণার ওপরে কিভাবে সাজা হয়?
জানা গেছে, মামলার আইনগত নানাদিক সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছেন দলের আইনজীবীরা। সেভাবেই তারা প্রতিটি শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। অন্য দিকে মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে দলটি এ মুহূর্তে তেমন কিছুই ভাবছে না। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ‘বৃহত্তম একটি দলের চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়া হবে, আর সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে তাতো হতে পারে না।’
এ দুটো মামলা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার নয়া দিগন্তকে বলেন, মামলার বিচার যদি আইনের স্বাভাবিক গতিতে যায়, মামলার কাগজপত্র পড়ে যা দেখলাম, তাতে তার জেল হওয়ার কারণ নেই। তবে সেটি সম্পূর্ণরূপে আদালতের ওপর নির্ভর করছে। আমার বিশ্বাস খালেদা জিয়া দু’টি মামলাতেই খালাস পাবেন।
‘আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা হলে কী হবে’- এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত আইন যা আছে, তাতে আপিল করলে জামিন পাবেন এবং জামিন পেলেই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। যুক্তিতর্ক ও ফ্যাক্টসের দিক থেকে তিনি বলেন, আপিলটা ট্রায়াল কোর্টের কন্টিনিউয়েশন। আপিল কোর্টে যা হবে, সেটাই ফাইনাল। যতণ না ফাইনাল হচ্ছে, ততণ পর্যন্ত আপনার জেল হয়নি। জেল হিসেবে কাউন্ট হবে জাজমেন্টের পর।