উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণে দেশটির ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। শুক্রবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ১৫-০ ভোটে অর্থাৎ সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
এদিকে উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এক টুইট বার্তায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিবিসি ও এএফপির খবরে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার চীন ও রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটাভুটিতে পাস হওয়া প্রস্তাবনায় উত্তর কোরিয়ায় তেল সরবরাহ ৯০ শতাংশ কমানোর পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের ১২ মাসের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার নাগরিক চীন ও রাশিয়ায় কর্মরত রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির মতো পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধের পদক্ষেপও প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার ওপর এক বছরে এটি তৃতীয়বারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে এ বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
উল্লেখ্য, কিম জং-উনের উত্তর কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানি করে থাকে চীন।
উত্তর কোরিয়ার ওপর অনেক আগেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে।
টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ব শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবে। ১৫-০ শূন্য ভোটে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিশ্ব শান্তি চায়, মৃত্যু নয়।’
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তিবিশেষও এ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বেন। জব্দ হয়েছে তাদের বহু সম্পদ। বন্ধ হয়েছে বহু পণ্য ও সেবা সরবরাহও।
বিশ্বের চাপ উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকায় এ বছর উত্তেজনা বেড়েছে। কঠোর আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না বলে জানিয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া। গত ২৯ নভেম্বরে উত্তর কোরিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে সক্ষম বলে দাবি করেছে দেশটি।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, ‘এর মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে স্পষ্টত বার্তাই দেওয়া হলো যে, তারা এরপরও বেপরোয়া থাকলে আরও শাস্তি পাবে। আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’
আগের নিষেধাজ্ঞায় কী হয়েছিল?
এর আগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দমানো যায়নি উত্তর কোরিয়াকে। তাই এবারও এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের মধ্য।
* ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু এর সাড়ে পাঁচ মাস পরেই ব্যালিস্টিক রকেটের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া।
* ২০১৭ সালের ২ জুন জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ১৪ কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিভৃতকামী কমিউনিস্ট দেশটি এর এক মাস পরে আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার দাবি করে বসে।
*এ বছরের ২০১৭ সালে ৬ আগস্ট এবং কয়লার ওপর বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। পরের মাসেই হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালায়।