ঢাকা: প্রায় দেড় মাস অন্ধকার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান। তাঁর ভাষ্য, ‘কিছুদিন ধরে অপহরণকারীদের মধ্য বাগ্বিতণ্ডা চলছিল। একে (মোবাশ্বার) রাখব না মেরে ফেলব- এ রকম কথাবার্তা হচ্ছিল।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে নিজ বাসার সামনে মোবাশ্বার হাসান সংবাদকর্মীদের এসব কথা জানান। বাসার নিচে নেমেই চারপাশে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর দিনের আলো।’ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ছয় মিনিটের মতো কথা বলেন মোবাশ্বার হাসান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা, বোন ও চাচা।
বারবার কান্না চেপে এত দিনের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন মোবাশ্বার। জানালেন, যে ঘরটিতে এত দিন বন্দী ছিলেন সেখানে একটি জানালা ছিল। কিন্তু সেটি সিল করে বন্ধ করে দেওয়া। ফলে ঘর থাকত অন্ধকার। ময়লা তোশক ছিল। সেখানে ঘুমাতেন। পাশেই আরেকটা ঘর ছিল। সেখান থেকে অন্য মানুষের কথাবার্তা শুনতে পাওয়া যেত। হোটেলের ঠান্ডা খাবার দেওয়া হতো বলে মনে হতো তাঁর।
মোবাশ্বারের ভাষ্য, অপহরণকারীদের বিভিন্ন সময় তিনি টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা ২৭ হাজার টাকাও অপহরণকারীরা নিয়ে নেয়। কিছুদিন ধরে নিজেদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা চলছিল অপহরণকারীদের মধ্যে। মনে হতো অপহরণকারীদের কেউ ‘মিসিং’ হয়েছে। অপহরণকারীরা মোবাশ্বারের বন্ধুবান্ধবের মধ্যে বড় কেউ (উচ্চপর্যায়ের) আছে কি না জানতে চাইতো।
ফিরে আসার বর্ণনা দিতে গিয়ে মোবাশ্বার বলেন, গতকাল রাতে চোখ বেঁধে একটা গাড়িতে তুলে বিমানবন্দর সড়কের কোনো এক জায়গায় অপহরণকারীরা তাঁকে নামিয়ে দেয়। বলে, ‘তুই চলে যা পেছনে তাকালে মেরে ফেলব।’ পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ডেকে বাসায় ফেরেন।
৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন মোবাশ্বার। ওই দিন কী ঘটেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকার আগারগাঁওয়ে একটা বৈঠক শেষে ইউএনডিপি ভবন থেকে বাসায় ফেরার জন্য উবার গাড়ি ডেকেছিলাম। গাড়িতে ওঠার পর ফোনে কাজ করছিলাম। তখন কয়েকজন ব্যক্তি এসে গাড়িটি থামায়।’ তারা বলে, ‘এটি চোরাই গাড়ি নামতে হবে। নামার পর আরেকটা গাড়ি খুঁজতে যাব তখন পেছন থেকে চোখে মলম লাগানো হয়। চোখ জ্বলছিল। পেছনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে তোলা হয়। তোলার পর তারা মুখে কিছু একটা চেপে ধরে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
‘নিখোঁজ’ থাকার সময় গণমাধ্যমের ভূমিকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান মোবাশ্বার হাসান।
মোবাশ্বার হাসানের বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আমরা খুব খুশি।’