শীত এলেও গত কয়েক দিনে তা রাত আর ভোর ছাড়া তেমন টের পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল বুধবার ভোর থেকে হঠাৎ করে জেঁকে বসে শীত; সঙ্গে ঘন কুয়াশা।
ঢাকার অনেক এলাকা, রাস্তাঘাটে কুয়াশার চাদরে আটকে যায় চোখ। ঘন কুয়াশার কারণেই গতকাল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা অনেকক্ষণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পদ্মায় মাঝনদীতে আটকে যায় অনেক ফেরি, মেঘনায় আটকে পড়ে লঞ্চ। উত্তরাঞ্চলে মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর সব কিছুই ঢাকা পড়েছিল কুয়াশার আড়ালে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব না থাকায় এবং উপমহাদেশে উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব না থাকার কারণে আবহাওয়ার এমন গুমট ভাব দেখা যাচ্ছে। আগামীকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার প্রভাব ও আকাশে মেঘলা ভাব অব্যাহত থাকতে পারে।
ওই আবহাওয়াবিদ বলেন, এ মাসের শেষের দিকে এক দফা শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। গতকাল সর্বনিম্ন ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায়।
বিমান ওঠানামা বন্ধ : এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে একাধিক ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণে সমস্যার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় সব ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘন কুয়াশায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশের সব কটি বিমানবন্দরে। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টা থেকে গতকাল সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত এ অচলাবস্থা চলে। এ সময় দেশি-বিদেশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মোট ৩৩টি ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হয়। ওঠানামা করতে না পেরে ডাইভার্ট (বিকল্প গন্তব্যে অবতরণ) হয়েছে পাঁচটি, বিলম্বের শিকার হয়েছে ৯টি, বাতিল করতে হয়েছে পাঁচটি, রিশিডিউল করতে হয়েছে ১৪টি ফ্লাইট। এর মাসুল দিতে হয়েছে হাজারো যাত্রীকে। অনেকে নির্ধাতির ফ্লাইট ধরতেও ব্যর্থ হয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি অনেকটাই ছিল রাজপথের যানজটের মতো। একসঙ্গে কমপক্ষে দশ হাজার যাত্রী শাহজালালে আটকে পড়ায় তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। চরম অনিশ্চয়তায় হাজার হাজার যাত্রী আটকে পড়ায় বিপাকে পড়ে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আইএটিএ রুলস অনুযায়ী ছয় ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হলে যাত্রীদের হোটেলে নিয়ে খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বুধবার অধিকাংশ যাত্রীই বঞ্চিত হয়েছে এ সুযোগ থেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা উপবাস থাকা আর ন্যূনতম তথ্যসেবা না পাওয়ায় একপর্যায়ে যাত্রীরা বিশৃৃঙ্খল ও মারমুখী হয়ে ওঠে। তখন এপিবিএন সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান। এপিবিএন সিনিয়র এএসপি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাজার হাজার যাত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম জানিয়েছেন, এই অবস্থা শুধু শাহজালালে নয়, সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, কক্সবাজার ও সৈয়দপুরে যাত্রীরা ফ্লাইট বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, দেশের অন্যতম ব্যস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার রাত সাড়ে ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। টানা চার ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে পড়ে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ শত শত যান। এতে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটে আটকে পড়ে সাধারণ যাত্রী, নারী ও শিশুরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হয়।
দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডাব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আবু আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে টানা চার ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে গাড়িগুলো আটকে পড়ে ছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছোট-বড় মোট ১৬টি ফেরি সার্বক্ষণিক সচল রেখে গাড়িগুলো দ্রুত পারাপার করা হয়।