আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার অন্তঃসারশূন্য। এতগুলো ব্যাংক দিয়েছে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ব্যাংক দিয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের মালিক মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এত চুরি সেখানে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র বলা হতো গণতন্ত্র। ওটা একটি ভুল মন্ত্র, এখন ওটা হচ্ছে চুরিতন্ত্র। প্রত্যেকটি ব্যাংকে চুরি করে এমন একটি অবস্থা তৈরি করেছে যে ব্যাংকে আমানতকারীরা বলছেন—ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের প্রতিটি মেগা প্রজেক্ট হলো মেগা চুরির প্রকল্প। ছোটবেলায় বাচ্চারা না ঘুমালে মায়েরা গান শোনাত—ছেলে ঘুমাল পাড়া জুড়াল, বর্গি এল দেশে। বর্গি দেশের মধ্যে এসে গেছে। দেশকে লুট করে নিয়ে চলে যাবে। এ অবস্থা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। সেই আওয়ামী লীগ আবার সততার কথা বলে। তিনি অভিযোগ করেন, ইসলামি ব্যাংক গিলে ফেলেছে, বেসিক ব্যাংক গিলে ফেলেছে। এমনকি সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক গিলে ফেলার চেষ্টা করেছিল। সরকার দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বৈদেশিক আয় কমতে শুরু করেছে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোও লোকসানের সম্মুখীন। শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নতুন একটি থিওরি দিয়েছেন। কোনো একটি দেশের, কোনো একটি পত্রিকায় তাঁকে নাকি তিন নম্বর সৎ নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাহলে এ দেশের মানুষ কোথায় যাবে?’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সৌদি আরবে সম্পদের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আবার কোথায় থেকে ভুয়া কাগজ, ভুয়া টেলিভিশন-অনলাইন দিয়ে আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা বলে। আমরা বলেছি, প্রমাণ করেন। পারেননি বলে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রমাণ করতে না পারলে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এত সোজা না। সবাইকে শুধু বোকা বানিয়ে যাবেন না। সবাই কিছু বোঝে না? বাংলাদেশের মানুষকে এত বোকা ভেবে লাভ নেই।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দী করেছে। আর এর মাধ্যমে কথা বলার অধিকার, চিন্তা করার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার—এসব সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সবার প্রতি প্রশ্ন রেখে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, ‘আমি একটি প্রশ্নই তুলতে চাই, দেশের স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে, আমরা কি সেই গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে পেরেছি? পারিনি।’ তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসন চলছে। বারবার সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবে না। এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য আবারও লড়াই করতে হবে। বিএনপি চারদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত। নিজেদের শক্তি নিয়ে জ্বলে উঠতে হবে। জাতীয়বাদী শক্তিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। সব প্রতিরোধের মুখে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, ছাত্রদল, শ্রমিক দল এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।