ঠাকুরগাঁওয়ে নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছেঃ মহিলা পরিষদ

Slider নারী ও শিশু রংপুর

received_1518176444902665

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

আর্ন্তজাতিক নারী প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা মহিলা পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা দেব লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন বয়সের নারীরা তো বটেই, এমনকি মেয়ে শিশুরাও ভয়ংকর যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি। গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ এ সকল ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি স্কুল শিক্ষিকা নুরুন নাহার তানজিলাকে নির্যাতনকারী স্বামী পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক আনোয়ার ইসলাম কিভাবে এখনো বহাল তবিয়তে চাকড়ি করছেন ও কোন শক্তির বলে সে এখনো গ্রেফতার হচ্ছে না এ সম্পর্কে প্রশাসনকে ধিক্কার জানান।

এভাবে গ্রাম্য শালিস বৈঠক ও পুলিশের মামলা নেওয়ার ধীর গতির কারণে অপরাধীরা অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইরিন পারভীন লুনা, সাংগঠনিক সম্পাদ শাহানাজ বেগম পারুল, প্রচার ও গবেষণা সম্পাদক শম্পা ঘোষ রোমা প্রমূখ।

তথ্য মতে, গত ১০ মাসে ঠাকুরগাঁও জেলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক শিশু ও নারী। অন্যদিকে শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রায় ৫০ জন নারী। এই হিসাব শুধু থানায় দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে কিন্তু বাস্তব সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে জেলায় ১৪শ’ ৫৫ টি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকাড় হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দেড় শতাধিকের বেশি। এছাড়া ধর্ষনের শিকার হয়ে গত দুই মাসে ভর্তি হয়েছে ২০ জন শিশু ও নারী।

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক ও দ্রুত শাস্থি না হওয়ায় জেলায় ধর্ষণ, নির্যাতন, অতঃপর হত্যার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে বলে সুশীল সমাজের মানুষেরা মনে করছেন। শুধু ধর্ষণই নয়, রীতিমতো গণধর্ষণ হচ্ছে। সব মিলিয়ে অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে পড়েছে যে, প্রতিটি পরিবারই আজকাল নারী ও শিশু কন্যাদের নিয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের শাস্থি সর্ম্পকে অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু বলেন, ধর্ষনের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষনিক ভাবে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করছে। কিন্তু আদালতে দিনের পর দিন ধীর গতিতে মামলা চলমান থাকায় সঠিক শাস্থি পাচ্ছে না অভিযুক্তরা বরং আদালত প্রাঙ্গনে প্রতিনিয়ত হয়রানি শিকার হচ্ছে বিচার প্রার্থী ভুক্তভোগীরা।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফরহাত আহমেদ জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটনায় পুলিশ খুবই সোচ্ছার। কোন ঘটনা ঘটলেই পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের জন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, নারী ও শিশু নির্যাতনের মত ভয়ংকর কর্মকান্ডগুলো বেড়ে যাওয়াটা সমাজের জন্য ইতিবাচক নয়। জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রশাসন থেকে জনসচেতনতার উদ্যোগ গ্রহণ  করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *