হাইকোর্টের রায় আজ

Slider বাংলার আদালত

264216_127

 

 

 

 

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আজ রোববার হাইকোর্টে রায় হতে যাচ্ছে। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটি আজ রায় ঘোষণার জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

আসামি সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। আজ হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়ার দুটি ধাপ শেষ হতে যাচ্ছে।

এই মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। আর ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ‘রাষ্ট্র বনাম আরডিও তৌহিদুল আলমসহ অন্যরা’ শিরোনামে রোববারের কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার জন্য ডেথ রেফারেন্সটি রয়েছে। একটি ক্রমিকেই ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের ফৌজদারি আপিল, সরকারের করা আপিল ও আসামিদের জেল আপিলগুলো রয়েছে।

প্রত্যাশা ন্যায়বিচারের

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ নির্দোষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তৎকালীন বিডিআর বাহিনীর কিছু সদস্যের উচ্ছৃঙ্খলতা, হিংস্রতা ও অমানবিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা অভাবনীয়। আশা করি, রায়ে এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার হবে।’

বিডিআরের সাবেক ডিএডি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ তৌহিদুল আলমসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫৩ জনের কৌঁসুলি আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাশা আপিলকারীরা রায়ে ন্যায়বিচার পাবেন।

রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম জাহিদ সারওয়ার বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি মারা গেছেন, ১৪ আসামি এখনো পলাতক। যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি (বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু ও শফিকুল ইসলাম) মারা গেছেন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া ২৫৬ জনের মধ্যে ৩ আসামি মারা গেছেন, ২৮ জন আপিল করেননি। খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। মোট ৬ জন মারা যাওয়ায় ৬০৩ জনের বিষয়ে রায়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৪ জন ছাড়া অপর ৫৮৯ আসামি কারাগারে আছেন।

পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। এ মামলার বিচার হয় বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলাটির রায় দেন ঢাকার মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

আজ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *