পরিবারের জন্য ব্যয় করলে কি সওয়াব হবে?

Slider শিক্ষা

185925family1_kalerkantho-pic

 

 

 

 

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও তাদের দেখভাল করা আল্লাহ তাআলার একটি মহান বিধান। কোরআন-হাদিসে এর অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার অসিলা দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে আত্মীয়তার অধিকার প্রার্থনা করো। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর আত্মীয়-স্বজনরা একে অন্যের তুলনায় অগ্রগণ্য, আল্লাহর কিতাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে মহাজ্ঞানী। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৭৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রশস্ততা ও হায়াত বৃদ্ধি চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি : হাদিস ২০৬৭)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ (বুখারি : হাদিস ৫৯৮৪)

পরিবারের জন্য ব্যয় করার ফজিলত
নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ খরচ বহনের বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু একটি পার্থিব বিষয় মনে হলেও এটি একটি মহান দ্বিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন ও হাদিস অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে এ অধ্যায়টিকে কোনো দিক দিয়ে কম গুরুত্ব দেয়নি। নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করাও একজন মুসলিমের ফরজ দায়িত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম একটি ফরজ।

’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৯৯৯৩) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে। ’ (মুসলিম : হাদিস ৯৯৪) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে। ’ (বুখারি : হাদিস ৪০০৬)

ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যেভাবে বর্তায়
ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার দুটি কারণে বর্তায় : এক. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে, দুই. আত্মীয়তার সম্পর্কে। শরিয়ত বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না। ’ (আবু দাউদ : হাদিস ২১৪২)

স্ত্রীর ভরণ-পোষণের পরিমাণ
ভরণ-পোষণের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ত পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এই পরিমাণ পরিবেশ-পরিস্থিতি ও স্বামীর সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। (আলমুহিতুল বুরহানি : ৩/৫২৯-৫৩০, ফাতহুল কাদির : ৩/১৯৪) কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)

মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন—’অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির ওপর গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থান হালাল হিসেবে পেয়েছ। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা তোমাদের অপছন্দ হয় এমন লোককে তোমাদের বিছানায় আসতে দেবে না। যদি তারা এ অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাদের হালকা প্রহার করতে পারবে, যাতে শরীরে কোনো জখম বা আঘাত না হয়। আর তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের জন্য প্রয়োজন অনুপাতে খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করো। ‘ (সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *