ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরে হামলা–ভাঙচুর হল যে ভাবে

Slider জাতীয়
 d303e3d9ced997ce2b9bd69ee699cd56-59f485c429988

স্টাফ রিপোর্টার: আলমফেনীর ফতেপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করার পরপরই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে সাংবাদিকদের গাড়িও ছিল।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ফেনীর ফতেপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করার পরপরই অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এ সময় বিএনপির দলীয় পোস্টার ও স্টিকার লাগানো বেশ কিছু গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের মালিকানাধীন স্টার লাইন পেট্রল পাম্পের কাছ থেকেই গাড়িবহরে হামলা করা শুরু হয়। দুর্বৃত্তরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা। তাদের কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা গেছে।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। এ সময় প্রথম আলো, ডিবিসি, একাত্তর, বৈশাখী, চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা প্রথম আলোর গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

একাত্তর টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শফিক আহমেদ বলেন, ‘অতর্কিতে ৪০ থেকে ৫০ জন ছেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ির ওপর হামলা চালায়। আমাকে ও আমার চিত্রগ্রাহক আলম হোসেনকে তারা মারধর করে। আমাদের চ্যানেলের ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, এখনো রাস্তায় হামলাকারী দুর্বৃত্তরা অবস্থান করছে। মূলত স্টার লাইন পেট্রল পাম্পের কাছে তারা জড়ো হয়ে আছে।

এর আগে বেলা একটার দিকে কুমিল্লায় খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আসা বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কর্মীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিকেল চারটার দিকে ওই স্থান অতিক্রম করে।

এদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে কয়েক জায়গায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভাঙচুর করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা গণমাধ্যমের গাড়িও। ছবি: প্রথম আলোবিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাওয়ার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত। রাস্তায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। এরপরও পথিমধ্যে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে ফেরার পর খালেদা জিয়ার ডান চোখে ব্যান্ডেজ করা ছিল। তিনি লন্ডনে থাকা অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশে ফিরে রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি আজ কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু ফেনীতে সড়কে গাছ কেটে রাখা হয়েছে, চান্দিনার কুটুম্বপুর ও মুনিতলা এলাকায় আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে আজ শনিবার কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। ছবি: প্রথম আলোরুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় শঙ্কিত হয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল এই হামলা করেছে। বিএনপি নেত্রীকে দেখতে পথে মানুষের যে ঢল নামে, সেই ঢল থামাতে সরকার-সমর্থকেরা ‘নিম্ন রুচির’ পরিচয় দিয়েছেন। এসব হামলা ও বাধা দিয়ে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমানো যাবে না। আজ সকালে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশে খালেদা জিয়া যখন তাঁর বাসভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন কয়েকটি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করছিল। এই সম্প্রচার সরকারের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কয়েকটি টেলিভিশন বিএনপি নেত্রীর বাসভবনের ওখানে লাইভ (সরাসরি) দেখাচ্ছিল। সেখানে সেই সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটা আসলে সরকারের নির্দেশেই টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ লাইভ দেখানো বন্ধ করেছে, সরকারের হুমকিতেই এটা বন্ধ হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *