রূপনগর খাল নিয়ে কুৎসিত কর্মকাণ্ড

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয়

সরকারের উদাসীনতা এবং প্রভাবশালীদের দখলে হারিয়ে গেছে ঢাকার অধিকাংশ খাল। যে কটি টিকে আছে সেগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নেই। নদীর সঙ্গে সংযোগও প্রায় কাটা পড়ছে। জলাবদ্ধ হয়ে পরিণতি ভোগ করছে ঢাকার পৌনে দুই কোটি মানুষ। ঢাকাকে বাঁচাতে খাল উদ্ধারে নামতে হবে সরকারকে। প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজনের চতুর্থ কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ

160aeb7ef95364eb9056717e7838ff06-59f19cc51c51b

 

 

 

 

 

 

 

এই অবিশ্বাস্য কাজটি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। রূপনগর খাল ভরাট করে তারা রাস্তা বানাচ্ছে l

সরকারি তিন প্রতিষ্ঠানের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে হারিয়ে যাচ্ছে মিরপুরের রূপনগর খাল। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ খালের জায়গা প্লট করে বরাদ্দ দিয়েছে। খাল ভরাট করে রাস্তা বানাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। খালের ভেতরে পানির পাম্প বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আর সেখানেই খালটির এক মাথা বন্ধ হয়ে গেছে।

খালটির মালিক গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, খালের দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছে। ওয়াসা বলছে, তাদেরকে খালের সীমানা ঠিক করে দেওয়া হয়নি। আর সবচেয়ে ভয়ংকর কাজটি করা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, নকশা অনুযায়ী রাস্তার জায়গায় খাল। তাই তারা খাল ভরাট করে রাস্তা বানাচ্ছে

8d56aaf7ec45b91ae9d5215ddf84c27b-59f19cc52169a

 

 

 

 

 

 

 

ডিএনসিসির অঞ্চল-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবীর বলেন, মানুষের হাঁটাচলার জন্য ‘ওয়াকওয়ে’ বানানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ওয়াসার আপত্তির পর তা বন্ধ আছে। কেন এমন প্রকল্প নেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নকশা অনুযায়ী রূপনগর আবাসিক এলাকার পশ্চিমাংশে ৩০ ফুট রাস্তা, তারপর ৬০ ফুট প্রস্থের খাল এবং এরপর বিসিআইসির জমি। সে অনুযায়ী আবাসিক এলাকার লোকজনের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। এখন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে নকশায় উল্লেখ করা রাস্তার জমি চিহ্নিত করে দিতে বলা হয়েছে। তারা এটি নির্ধারণ করে না দেওয়া পর্যন্ত আর কাজ হবে না।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান বলেন, খালটি ওয়াসাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারাই দেখভাল করছে। এ সম্পর্কে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মিরপুর অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা খানম ভালো বলতে পারবেন। তানজিলা খানমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র না দেখে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

রূপনগর আবাসিক এলাকার পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রূপনগর খালটির শুরু কাগজে-কলমে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের কাছ থেকে। আর শেষ হয়েছে দিগুন খালের সঙ্গে মিশে। খালের পূর্ব পাশে রূপনগর আবাসিক এলাকা, পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। তাদের জায়গা তারা দেয়াল দিয়ে সংরক্ষণ করেছে। আর তাদের দাবি, এ দেয়াল তারা দিয়েছে আশির দশকে। খালের কোনো জমি তাদের দখলে নেই। থাকলে আছে রূপনগর আবাসিক এলাকার ভেতরে।

দখল হতে হতে এই খালের প্রস্থ এখন কোথাও ১০ ফুট, কোথাও ২০, কোথাও ২৫। আবার কোথাও ২-৩ ফুট।

10f7859d4f6b08fba9ae4cc17efef0fa-59f19cc51491a

 

 

 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৩ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশের কালভার্টের সামনে থেকে ৭ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশ পর্যন্ত খালে মাটি ফেলে রাস্তা বানাচ্ছে ডিএনসিসি। ওয়াসা বলছে, খাল যতটুকু ছিল, এই রাস্তার কারণে তার প্রায় অর্ধেকই ভরাট হয়ে গেছে। ছয়-সাত মাস আগে এই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা  বলেন, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ খালটি ওয়াসাকে হস্তান্তর করে। কিন্তু তারা খালের সামীনা নির্ধারণ করে দেয়নি। তখন যে অবস্থায় খালটি পাওয়া যায়, তাতে এর প্রস্থ কোথাও ১৮ ফুট, কোথাও ৬০ ফুট পর্যন্ত ছিল। সর্বশেষ ডিএনসিসি রাস্তা করা শুরু করলে ওয়াসা তাদের একাধিক চিঠি দেয়। আবার খালটির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকেও আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে ওয়াসা।

516fb5cdcf373a77cd7aa3735753d028-59f19cc51555f

ডিএনসিসিতে পাঠানো ওয়াসার একটি চিঠিতে দেখা যায়, ডিএনসিসিকে খালে ফেলা মাটি তুলে নিতে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, খালটি ভরাট হলে পুরো রূপনগর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে।

ওয়াসার আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল ডিএনসিসির অঞ্চল-২-এর নির্বাহী কর্মকর্তাকে খাল ভরাট করে রাস্তা না করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা রাস্তার কাজ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৬ মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার কাজ চলছে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চিঠি চালাচালির মধ্যেই খালের এক পাশ ভরাট করে ফেলেছে ডিএনসিসি। এখন রাস্তার পাশে কংক্রিট ব্লক ও পাকা করার কাজ বাকি। মাটির রাস্তার ওপর কংক্রিট ব্লক তৈরি করে ফেলেও রাখা হয়েছে।

9792768cc8dcbb57351645e520be226d-59f19cc523f65

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, এই এলাকায় কয়েকটি বাড়িও খালের জমিতে করা হয়েছে। রূপনগর আবাসিক এলাকায় ওয়াসার তৈরি পানির পাম্পটি তো খালের মধ্যে। ২৩ নম্বর সড়কের কালভার্টের পর থেকে ৭ নম্বর সড়ক পর্যন্ত খালের প্রস্থ ১৫ থেকে ২০ ফুট থাকলেও ৭ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির পেছনে এসে খালটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ৬ নম্বর সড়কের শেষ মাথা থেকে চার নম্বর সড়কের শেষ মাথা পর্যন্ত পুরো খালটিই বেদখল হয়ে গেছে। ওয়াসার পাম্পের পর বাকি জায়গায় একাধিক বাড়ি বানানো হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এমন একজন বাড়ির মালিক কাছে দাবি করেছেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষই তাঁদের এখানে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে।

59f6991dd842b109e9a4c8f554ccb5bd-59f19cc50b5da

নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রূপনগর খালটি ওই এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিএস বা আরএস
ম্যাপ অনুযায়ী খালটির প্রশস্ততা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এটা উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *