‘আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি’

Slider বিনোদন ও মিডিয়া সারাবিশ্ব

32e92c9819c2bdaecf740e39d9fedc0b-59e8957338dcc

 

 

 

 

কানে দুল, নাকে নাকছাবি। এটিই ‘থাগস অব হিন্দোস্তান’-এ চেহারা আমির খানের। সাক্ষাৎকার দিতে বসে মাথার হেয়ার ব্যান্ডটা চেয়ে পাঠালেন। কফিসহযোগে জমে উঠল এই বৈকালিক আড্ডা। আজ মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রযোজিত ও অভিনীত ছবি সিক্রেট সুপারস্টার। ‘থাগস অব হিন্দোস্তান’ অপেক্ষা করছে আগামী বছরের জন্য। আড্ডায় উঠে এল বলিউডের এই সুপারস্টারের অনেক ‘সিক্রেট’ কথা। আড্ডায় আমির খানের সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।

f8cca6b858e0bc35f65b851985202102-59e8957338e04

 

 

 

 

 

 

 

চরিত্রের প্রয়োজনে কান-নাক ফুটো করেছেন। যন্ত্রণা হয়নি?
ওরে বাবা, খুবই যন্ত্রণা হয়েছে। তবে আমার একটা বাজে অভ্যাস আছে। স্নান করার পর আমি তোয়ালে দিয়ে খুব জোরে মাথা মুছি। তার ফলে তোয়ালেটা কানের দুলে ফেঁসে যায়। তখন খুব ব্যথা লাগে।
কত দিন এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াবেন?
‘থাগস অব হিন্দোস্তান’ ছবির শুটিং শেষ হলে সব খুলে ফেলব।
এখন শুটিং বন্ধ রেখেছেন?
হ্যাঁ। পুরো সময়টা এখন আমি ‘সিক্রেট সুপারস্টার’কে দিতে চাই। তাই এক মাসের মতো শুটিং বন্ধ রেখেছি।
‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবিতে কাজ করার সিক্রেট কী ছিল?
সব সময় আমি নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করি। এই ছবিতে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, তা আগে কখনো করিনি। ছবির পরিচালক অদ্ভেত চন্দন আমাকে যখন প্রথম চিত্রনাট্য শোনাল, শুনেই আমি ‘না’ করে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এই অদ্ভুত চরিত্রে আমি অভিনয় করতে পারব না। অদ্ভেতই আমাকে রাজি করায়। আমি স্ক্রিন টেস্ট দিই। তারপর বেশ ভালো লেগে গেল। তবে আমার ব্যক্তিত্বের থেকে একদম আলাদা ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এর এই চরিত্রটা। তবে সব সময় আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি।
এ কারণেই কি টুইটারে বলেছিলেন এটা আপনার অভিনীত অন্যতম কঠিন চরিত্র হতে চলেছে?
একদমই তাই। ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এ আমার অভিনীত চরিত্র শক্তি কুমারের সঙ্গে কোনো মিলই আমার নেই। শক্তি কুমারের ডিএনএ একেবারেই আলাদা। আমরা দুই মেরুর বাসিন্দা। একটি চরিত্রে যা যা দোষ থাকে, তার সবকিছুই শক্তি কুমারের আছে। সে সবার সঙ্গে অভদ্রভাবে কথা বলে, বাচ্চাদের কাঁদায়, মেয়েদের সঙ্গে নখরামি করে, নিজেকে সব সময় বড় করে দেখায়, মিথ্যা কথা বলে। উল্টো দিকে আমি ব্যক্তিগত জীবনে অন্তর্মুখী স্বভাবের। মেয়েদের শ্রদ্ধা করি, ভদ্র ও নম্রভাবে কথা বলতে চাই। শক্তি কুমারের সব বৈশিষ্ট্যই আমার থেকে আলাদা।
বাস্তব জীবনে কি শক্তি কুমারের মতো কাউকে দেখেছেন কখনো?
হ্যাঁ, দেখেছি তো। তার মতো পাঁচ-ছয়জনকে তো দেখেছি। তাদের মিশ্রণেই এই চরিত্রটি হয়েছে। কেন, আপনি দেখেননি?
তারা কারা?
আপনি নিজের আন্দাজ লাগান। ছবিটা মুক্তি পাক। নিজে দেখে আপনিই বুঝতে পারবেন এই চরিত্রগুলো কারা। (সশব্দে হেসে)

eb7bf2eb2c65405b9e2c433dcdc15b66-59e8957336e83

 

 

 

 

আপনার অভিনীত কোন চরিত্রটির সঙ্গে বাস্তবে আপনি নিজের মিল খুঁজে পান?
আমার মনে হয়, আজ পর্যন্ত যে যে চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি, তার মধ্যে ‘তারে জমিন পর’-এর নিকুম্ভ স্যারের সঙ্গে আমার মিল আছে। ওই চরিত্রটা আমার খুব কাছের।
‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবিতে আপনাকে সংগীত পরিচালকের চরিত্রে দেখা যাবে। তার জন্য আপনি কি কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেছেন?
ছবিটিতে আমার অভিনীত চরিত্রের জন্য যতটুকু মিউজিক জানা প্রয়োজন, সেটুকু ধারণা আমার আছে। এত বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে সংগীতের কিছু ধারণা আমি অর্জন করেছি। আনু মালিক, এ আর রহমান, যতীন-ললিত, জাভেদ আখতারের কাছে আমি মিউজিকের অনেক সেশন করেছি। তাই আলাদা করে আর শেখার প্রয়োজন হয়নি।
আপনার কাছে নিশ্চয় প্রচুর চিত্রনাট্য আসে। এত ব্যস্ততার মধ্যে চিত্রনাট্য পড়ার সময় বের করেন কী করে?
আমার মধ্যে অভিনয়ের খিদে এলেই আমি চিত্রনাট্য পড়তে শুরু করি। রোজ অফিসে প্রচুর চিত্রনাট্য জমা পড়ে। আমার ম্যানেজার শমত সেসব চিত্রনাট্য থেকে সেরাগুলো বাছাই করে আমাকে পড়তে দেয়। আমার যখন চিত্রনাট্য পড়ার সেই খিদেটি তৈরি হয়, তখনই আমি পড়ি। অনেক সময় আবার পরিচালকের তাড়া থাকে। তখন শমতকে বলি, যাদের তাড়া আছে, তাদের চিত্রনাট্য ফেরত দিয়ে দাও। আমার যখন ইচ্ছা হবে, তখনই আমি পড়ব। আমি দেখি চিত্রনাট্যে যা আছে, পরিচালক তা তুলে ধরতে পারছেন কি না। অভিনেতা-অভিনেত্রী ঠিকঠাক নিয়েছেন কি না। ঠিকমতো পরিচালনা করার প্রস্তুতি আছে কি না। সম্পাদনা ঠিকঠাকমতো হবে কি না। আর যখন এসব কিছু ঠিক থাকে, তখনই আমি রাজি হই। অভিনেতাদের যেমন স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হয়, আমিও পরিচালকের স্ক্রিন টেস্ট নিই। (সশব্দে হেসে)
শুনেছি ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ ছবিতে আপনার লুক দেখে কিরণ অবাক হয়ে গিয়েছেন।
হা হা হা। হ্যাঁ, কিরণের অভিব্যক্তি সত্যিই দেখার মতো ছিল। কখনো ‘ইয়ায়ায়া’ বলে চেঁচিয়ে উঠছিল, কখনো আবার হেসে কুটিকুটি হয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
আপনার এই চেহারা নিয়ে ছেলে আজাদ কী বলল?
আজাদকে কখনো আমি এ নিয়ে জিজ্ঞেস করিনি। ভালো কথাই বলেছেন, আজই আজাদের কাছে জানতে চাইব।
ছবিতে আপনি আপনার লুক নিয়ে খুব সচেতন থাকেন। একেকটা ছবিতে নিয়ে আসেন একেক রকম লুক। এমন কী হয়েছে যে কখনো কোনো একটি লুক পরে আপনার নিজেরই পছন্দ হয়নি?
হয়েছে তো। আপনি কি দেখেছেন আমার ‘আতঙ্ক হি আতঙ্ক’ ছবিটা? ইতালির এক মাফিয়ার কাহিনির ভিত্তিতে ছবিটি তৈরি করা হয়। সেই ছবিটিতে আমাকে থ্রিপিস স্যুট পরিয়ে দেওয়া হলো। মাথায় জেল লাগিয়ে দেওয়া হলো অদ্ভুত এক লুক। প্রথমে আমি আমার লুক নিয়ে খুব তৃপ্ত ছিলাম। ভেবেছিলাম, দারুণ একটা ব্যাপার করেছি। তখন অবশ্য বয়সটা ছিল কম। ছবি মুক্তির পর নিজেকে দেখে মনে হলো, আরে, আমি এটা কী করেছি? এটা করা তো আমার মোটেই ঠিক হয়নি। এটা যদি ইউরোপের প্রেক্ষাপটে হতো, তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু ভারতে স্যুট পরা মাফিয়া ডন একদমই বেমানান।
কিছুদিন আগে তো ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ আর ‘থাগস অব হিন্দোস্তান’ ছবি দুটিতে আপনার লুক প্রকাশিত হয়ে যায়। সময়ের আগে প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় অভিনেতা হিসেবে আপনার রাগ হয়নি?
তাই নাকি, ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এর লুকও প্রকাশ হয়ে গেছে নাকি? ‘থাগস অব হিন্দোস্তান’-এর লুক যে প্রকাশ হয়ে গেছে, সেটা আমি জানি। এই লুক তো দর্শকদের দেখানোর জন্যই। একটি ছবিতে কোনো লুকের জন্য আমরা অভিনেতারা খুব পরিশ্রম করি। আমরা চাই আমাদের লুক ঠিকঠাক ও ভালোভাবে দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করতে। তাই সময়ের আগে তা প্রকাশ্যে চলে এলে খারাপ তো লাগবেই। এখন কোনো সাংবাদিক যদি লুকিয়ে-চুরিয়ে ছবি তুলে নেয়, তো আমরা কীই-বা করতে পারি। এসব ক্ষেত্রে আমার রাগ হয়, তবে অতটাও নয়। আপনারা হয়তো ভাবেন, আমার আগামী ছবির পুরো লুকটাই দেখে ফেলেছেন। আদপে কিন্তু তা নয়। কারণ আমি জানি, আপনারা কেউ আমার সম্পূর্ণ লুকটা এখনো দেখেননি।
শেষ প্রশ্ন, আপনার তো ৩০ বছর হতে চলল এই চলচ্চিত্রজগতে। কী পেলেন, আর কীই-বা হারালেন?
এই রে! এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সারা দিন লেগে যাবে আমার। পেয়েছি তো অনেক কিছুই। সবচেয়ে বড় কথা, প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। যদি হারানোর কথা বলি, আমার পরিবারকে আমি সময় দিতে পারি না। আমার মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি না। জুনায়েদ আর মেয়ে ইরা ছোট থাকতে তাদের সময় দিতে পারিনি। সে কারণে এখন আজাদকে সময় দিতে শুরু করেছি। এবার যাই, আজাদের আসার সময় হয়ে এল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *