বেতনের চার গুণ ওভারটাইম

Slider জাতীয় ঢাকা

10372669b7574fc1cd0938c541cb1f05-59e5cd8304080

সেগুনবাগিচায় ওয়াসার পাম্প অপারেটর আজিজুল হকের মূল বেতন ১৭ হাজার ৯৬০ টাকা। গত আগস্টে তিনি আগের বছরের ডিসেম্বর মাসের ওভারটাইম (বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন) বিল তুলেছেন ৬৯ হাজার ৩৫২ টাকা, যা তাঁর বেতনের প্রায় সাড়ে চার গুণ!

আজিজুল হক কোনো ব্যতিক্রম নন। ঢাকা ওয়াসার সাড়ে তিন হাজার কর্মীর প্রায় সবাই এ রকম অস্বাভাবিক ওভারটাইম তুলছেন প্রতি মাসে। বেশির ভাগেরই ওভারটাইম বিলের পরিমাণ তাঁদের মাসিক বেতনের চেয়ে বেশি। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত।

আজিজুল হকের ওভারটাইমের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ডিসেম্বর মাসে তিনি ৩৩৫ ঘণ্টা ওভারটাইম করেছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন তিনি ১১ ঘণ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে তাঁর মোট কর্মঘণ্টা দাঁড়ানোর কথা ১৯ ঘণ্টা। দৈনিক ১৯ ঘণ্টা কাজ করা কীভাবে সম্ভব, জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, তিনি অতিরিক্ত যে কাজ করেছেন, ওভারটাইম সে অনুযায়ীই হয়েছে। এখানে ভুয়া কিছু নেই।

ডিসেম্বর মাসের ওভারটাইমের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, পাম্প অপারেটর দেলোয়ার হোসেন ৬৬ হাজার ৩১ টাকা, জাকির হোসেন ৫৮ হাজার ৩৮৪ টাকা, আবদুল হাকিম ৫৬ হাজার টাকা, সিদ্দিকুর রহমান ৬৯ হাজার ৩৫২ এবং গোলাম মোস্তফা মিয়া ৫৮ হাজার ৩৮৪ টাকা ওভারটাইম বিল তুলেছেন। তাঁদের সবাই বলেছেন, তাঁদের বিলে কোনো ফাঁকি নেই, বাড়তি কাজ করে বিল নিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ওয়াসা আর্থিক সংকটে থাকলেও কর্মচারীদের ওভারটাইম দেওয়ার বিষয়ে কোনো কার্পণ্য দেখা যায়নি। এমনকি কোনো কর্মচারী যথেচ্ছ ওভারটাইম তৈরি করে দাখিল করেছেন কি না, তা যাচাই-বাছাই করার প্রমাণও পাওয়া যায় না।

সাড়ে তিন হাজার কর্মচারী গত বছরের জুন মাসে ওভারটাইম বাবদ সাড়ে চার কোটি টাকার কিছু বেশি বিল তুলেছিলেন। আর গত ডিসেম্বর মাসে এই বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি টাকা, যা মোট বেতনের আড়াই গুণের বেশি। নতুন বেতনকাঠামোতে ওভারটাইম লাগছে বছরে ১৩২ কোটি টাকা।

গত বছরের জুনে ওয়াসার অস্বাভাবিক ওভারটাইম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওভারটাইম দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে সেটা। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়া হয়েছে গত ফেব্রুয়ারির ওভারটাইম।

ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে জানা যায়, নতুন বেতন স্কেলে বেতন, কর্মচারীদের নামে গৃহায়ণ ঋণের অগ্রিম মঞ্জুরি, বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল, প্রকল্পের ঋণের কিস্তি ও অন্যান্য খাতের খরচ জোগাতে ওয়াসাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বকেয়াও পড়েছে। ওয়াসার হিসাব ও বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গত প্রায় দেড় বছর আর্থিক ব্যবস্থাপনা রক্ষা করা একরকম কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ কর্মচারীদের ওভারটাইম বাবদ অস্বাভাবিক বিল দেওয়া হচ্ছে।

ওভারটাইম আদায়ের জন্য মাঝে মাঝে কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা-কর্মীরা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণও করেন। গত ৫ জুন ওভারটাইমের দাবিতে প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন কর্মচারী ইউনিয়নের লোকজন।

ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং কর্মচারী ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. হাফিজউদ্দিন বলেন, লোকবল কম বলে অনেক কর্মচারী অতিরিক্ত কাজ করে ওভারটাইম নিয়ে থাকেন। এতে দোষের কিছু নেই। বাড়তি বিল করার প্রশ্নই ওঠে না।

ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হোসেন বলেন, ওয়াসায় লোকবল কিছু কম আছে, এটা ঠিক। তবে একেকজন কর্মীর এত ওভারটাইম বিল হওয়াটা অস্বাভাবিক। ওয়াসার লোকবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *